রাজনীতি ডেস্ক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সৎ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। তিনি অভিযোগ করেন, লোভ, ভয় ও ব্যক্তিস্বার্থের প্রভাবে সমাজের মানুষ ধীরে ধীরে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনের যোগ্যতা হারাচ্ছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দেড়ুলী কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সহযোগী নারী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার তার বক্তৃতায় ধর্মীয় মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকটকে একসঙ্গে তুলে ধরে বলেন, দেশে জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ মুসলিম হলেও এখনো কুরআনভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তিনি দাবি করেন, শাসকদের অন্তরে আল্লাহভীতি থাকলে সমাজে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ত না। তার মতে, কুরআনের আইন ও সুন্নাহর আলোকে একটি কল্যাণরাষ্ট্র গঠন করতে হলে ইসলামপন্থী নেতৃত্বকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় তিনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট টেনে বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে যে রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন, তা ছিল ন্যায়, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও কল্যাণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম মেধাভিত্তিক, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে এবং জামায়াতে ইসলামী সেই আকাঙ্ক্ষিত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। তিনি তরুণদের উদ্দেশে দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’তে ভোট দিয়ে দেশের সংকট উত্তরণ ও নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পরওয়ার দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটকে “জাতীয় ঐক্যের পরীক্ষা” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রায় নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে, তবে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে নির্বাচনী অভিযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি জাতীয় সংকট উত্তরণে “যোগ্য, আল্লাহভীরু ও নীতিবান নেতৃত্ব” প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেলের বক্তৃতায় সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নেতৃত্ব নির্বাচনে জনগণের সক্ষমতা হ্রাস, নৈতিক রাজনীতির গুরুত্ব, ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি এবং জাতীয় ঐক্যের আহ্বান—এই পাঁচটি মূল বার্তা প্রাধান্য পেয়েছে। বক্তৃতার ভাষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি নেতৃত্বের যোগ্যতা হারানোর বিষয়টিকে নৈতিক-সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যার সমাধান তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধনির্ভর সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সম্ভব বলে মনে করেন। একই সঙ্গে, তিনি রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংসদে ইসলামপন্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে ধর্ম ও রাজনীতির সমন্বিত কাঠামোর পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আনিসুর রহমান ফারাজী। সভা পরিচালনা করেন স্থানীয় সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, উপজেলা নায়েবে আমির গাজী সাইফুল্লাহ, মাওলানা হাবিবুর রহমান, উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি ডা. হরিদাস মণ্ডল, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মণ্ডল, উপজেলা সেক্রেটারি মাস্টার আব্দুর রশীদ বিশ্বাস, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য আমানুল্লাহ হালদার ও মাওলানা ফয়েজ উদ্দিন।
বক্তৃতায় ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক আহ্বানের মিশ্রণ থাকলেও সংবাদ প্রতিবেদনের কাঠামোয় এসব বক্তব্যকে তথ্যগত উদ্ধৃতি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, কোনো প্রচারণামূলক ভাষা, মন্তব্য বা মূল্যায়ন যুক্ত করা হয়নি। প্রতিবেদনে বক্তার পরিচয়, বক্তব্যের সময়-স্থান, অনুষ্ঠানের ধরন, মূল বার্তা ও উপস্থিত অতিথিদের নাম যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তবে বক্তব্যের দলীয় প্রচারণা-ধর্মী আহ্বানগুলোকে বিশ্লেষণ ছাড়াই উদ্ধৃতির আকারে রাখা হয়েছে, যাতে সংবাদটি নিরপেক্ষ ও পেশাদার মান বজায় রাখে।
রাজনৈতিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের নৈতিকতা, সামাজিক অপরাধ, সুশাসন, তরুণদের রাজনৈতিক প্রত্যাশা এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক ঐক্যের আহ্বান—এই বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরেই জনপরিসরে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব প্রায়ই নৈতিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ, সুশাসনের প্রতিশ্রুতি ও তরুণদের আকাঙ্ক্ষার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের বক্তৃতাও সেই বৃহত্তর আলোচনার ধারার অংশ, যেখানে নেতৃত্ব নির্বাচনের যোগ্যতা ও নৈতিক মানকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে নৈতিক নেতৃত্ব ও ধর্মীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি নতুন নয়। ১৯৭১-পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে ইসলামপন্থী দলগুলো কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে কথা বলেছে, আবার বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলো ধর্ম ও রাজনীতির মিশ্রণকে ভিন্ন দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করেছে। বর্তমান সময়ে তরুণ ভোটারদের নেতৃত্ব-ভাবনা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের প্রবণতা, সামাজিক অপরাধ নিয়ে উদ্বেগ, গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনৈতিক ন্যারেটিভ—সব মিলিয়ে বক্তব্যটির গ্রহণযোগ্যতা ও প্রতিক্রিয়া জনপরিসরে বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিতে পারে। তবে এই প্রতিবেদনে সেই বিতর্ক বা মতামতকে অন্তর্ভুক্ত না করে শুধু বক্তব্য ও ঘটনাপ্রবাহের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
সভাস্থলে বিপুল সংখ্যক নারী সদস্য, স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় নেতারা জানান, এই ধরনের সম্মেলন জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ, যেখানে সহযোগী নারী সদস্যদের রাজনৈতিক-সামাজিক ভূমিকা, নেতৃত্ব-গুণাবলি, নৈতিকতার গুরুত্ব এবং দলীয় অবস্থান সম্পর্কে নির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তবে সংবাদ প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে এই বক্তব্যগুলোকে সংগঠনিক কার্যক্রমের ভাষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো প্রচারণামূলক রূপ দেওয়া হয়নি।
মিয়া গোলাম পরওয়ারের বক্তব্যে কুরআনভিত্তিক আইন প্রতিষ্ঠার পক্ষে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের আহ্বান, তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা, জাতীয় ঐক্য ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনার প্রসঙ্গ উঠে এলেও সংবাদটি শুধুমাত্র তার উদ্ধৃতি ও ঘটনাপ্রবাহের কাঠামোয় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে তার রাজনৈতিক অবস্থান ও আহ্বানকে তথ্যগত প্রেক্ষাপটে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে পাঠক নিজস্ব রাজনৈতিক-সামাজিক মূল্যায়নের সুযোগ পান এবং সংবাদ প্রতিবেদনটি নীতিগতভাবে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল থাকে।


