শেখ আবু তালেব: বিশ্ব্যব্যাপী বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। দেশের ব্যাংক খাতেও দিন দিন এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার ব্যাংক খাতে ডিজিটাল ন্যনো ঋণ বা ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ চালুর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ডিজিটাল ঋণ বাস্তবায়নে সফল দেশ তানজানিয়া ও কেনিয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
সূত্র অনুযায়ী, ডিজিটাল ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ২৪ ঘণ্টা বা দিন-রাত যেকোনো সময় আবেদন করা যাবে। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ঋণ মঞ্জুর হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের হিসাবে অর্থ চলে যাবে। ঋণের আবেদন বাতিল হলেও গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ ঋণ হবে জামানতবিহীন। ঋণ পরিশোধের সময় হবে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন বা ছয় মাস। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা গেলেও পরে মাঝারি আকারের ঋণ দেওয়া যেতে পারে। সকল প্রকার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ, সেবার বিল পরিশোধ, সঞ্চয়ী হিসাবও পরিচালনা করা যাবে। ঋণ প্রদানের জন্য একটি ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন হবে, যাতে একজন গ্রাহক কত ঋণ নিয়েছেন তা জানা যায়।
জানা গেছে, দেশের ব্যাংক খাতে ডিজিটাল কারেন্সি প্রচলনে বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক আগ্রহ প্রকাশ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়। ডিজিটাল কারেন্সির বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে একটি কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চার সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির নেতৃত্বে রাখা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালকে।
কমিটির সদস্যরা গত জানুয়ারিতে তানজানিয়া ও কেনিয়া সফর করেন। একইসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ব্যাংক, ডিজিটাল ফাইন্যান্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল মানি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিটির সদস্যরা। এই কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডিজিটাল ন্যানো ঋণের বিষয়ে একটি সার-সংক্ষেপ প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তানজানিয়া ও কেনিয়ায় প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এটিকে ডিজিটাল ন্যানো বা ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে বলা যায়। ডিজিটাল ঋণ সম্পর্কে বলা হয়, প্রচলিত ধারার কাগুজে আবেদন ও প্রক্রিয়াকরণের পরিবর্তে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আবেদন করা হয়। প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঋণগ্রহীতার তথ্য বিশ্লেষণ করে ঋণ মঞ্জুর করা হয়।
এজন্য প্রচলিত কাগুজে কেওয়াইসি’র (গ্রাহক শনাক্তকরণ ফরম) পরিবর্তে ই-কেওয়াইসি বা ডিজিটাল কেওয়াইসি ব্যবহার করতে হবে। গ্রাহকের মোবাইল নম্বর নিজ নামে থাকতে হবে, যা যাচাই করে দেখা হবে। ঋণগ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্রও শনাক্তের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে জনসংখ্যার বিপুল পরিমাণ ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসেনি। ব্যাংকের উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও ডিজিটাল ঋণ বিতরণ করা সম্ভব। ডিজিটাল ঋণকে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যানো ঋণ বলছে। এর মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সকল ধরনের ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা সম্ভব। এতে ঋণপ্রাপ্তি ও আদায় সহজ হবে। ডিজিটাল হওয়ায় ব্যবস্থাপনা খরচও কমে যাবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা গেলেও পরে মাঝারি আকারের ঋণ দেওয়া যেতে পারে। সকল প্রকার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ, সেবার বিল পরিশোধ, সঞ্চয়ী হিসাবও পরিচালনা করা যাবে। ঋণে প্রদানের জন্য একটি ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন হবে, যাতে একজন গ্রাহক কত ঋণ নিয়েছেন, তা জানা যায়।
এ মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক যুক্ত হতে পারে। এতে মোবাইল মানি হিসেবে অর্থ লেনদেন করা সম্ভব। তানজানিয়া ও কেনিয়ায় মোবাইল কোম্পানিও অর্থ লেনদেন করছে। বিশেষ করে বিল পরিশোধে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়, ডিজিটাল ঋণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রচলন করা যেতে পারে। এটি সফল হলে পরে পুরো ব্যাংক খাতে প্রচলন করা সম্ভব।
অবশ্য ডিজিটাল ন্যানো ঋণ পদ্ধতি প্রচলনের বিষয়ে কয়েকটি চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে গ্রাহক ও ব্যাংককর্মীদের ধারণা প্রদান। ব্যাংক হিসাব হ্যাকিং হওয়া থেকে নিরাপদ রাখতে জনসচেতনা বৃদ্ধি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ঋণ জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থের লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দুষ্টচক্র এ খাতেও হানা দিতে পারে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।