মহামারি করোনার কারণে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে উপার্জনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৫ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ৫১ শতাংশ মানুষের খানাভিত্তিক আয় শূন্যে নেমে এসেছে। সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংক্রমণ মোকাবিলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মানুষের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ব্র্যাক সম্প্রতি এ জরিপ পরিচালনা করে।
গত ৯ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় পরিচালিত এ জরিপে বিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থার ২ হাজার ৩১৭ জন অংশ নিয়েছেন, যার ৬৮ ভাগ গ্রামাঞ্চল ও ৩২ ভাগ নগর এলাকার বাসিন্দা। অংশগ্রহণকারীদের ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ ও ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর নিম্ন আয়ের দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল মানুষ ধীরে ধীরে জীবিকা নির্বাহের পথে ফিরে আসছেন। কিন্তু এসব পরিবারের অনেকের জন্য অন্তত আগামী তিন মাসের জন্য ধারাবাহিক খাদ্য বা আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
এক ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে আরো বলা হয়, দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল ও স্বল্প আয়ের মানুষদের ৬২ শতাংশ চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। আর্থিক কর্মকাণ্ডের দিক থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন ২৮ শতাংশ। সাধারণ ছুটির আগে যেখানে খানাভিত্তিক গড় মাসিক আয় ছিল ২৪ হাজার ৫৬৫ টাকা, সেখানে মে মাসে ৭৬ ভাগ কমে ৭ হাজার ৯৬ টাকায় নেমে আসে। শহর এলাকায় আয় কমার হার ৭৯ শতাংশ। পল্লি অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ। পাঁচ জেলার উত্তরদাতারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে জরিপে বেরিয়ে এসেছে। জেলাগুলো হলো—পিরোজপুর ৯৬ শতাংশ, কক্সবাজার ৯৫ শতাংশ, রাঙ্গামাটি ৯৫ শতাংশ, গাইবান্ধা ৯৪ শতাংশ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৯৩ শতাংশ।
পুরুষপ্রধান খানার চেয়ে নারীপ্রধান খানাগুলো আর্থিক দিক থেকে কিছুটা বেশি নাজুক। নারীপ্রধান খানার আয় কমেছে ৮০%, অন্যদিকে পুরুষপ্রধান খানার আয় কমেছে ৭৫%। নারীপ্রধান খানাগুলোর মধ্যে ৫৭% জানিয়েছেন বর্তমানে তাদের কোনো উপার্জনই নেই। পুরুষপ্রধান খানাগুলোর ৪৯% এ কথা জানিয়েছেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক বিভাগের সাবেক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক শামেরান আবেদ, বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান ও ব্র্যাকের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ।