ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত জুনের মধ্যে এক অঙ্ক অর্থাৎ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা ছিল। তবে এখনও এর বেশি রয়েছে ১৬টি ব্যাংকে। সরকারি মালিকানার ৯টি, বেসরকারি খাতের ৫টি এবং বিদেশি মালিকানার দুটি ব্যাংক এই তালিকায়। কোনো কোনো ব্যাংকের বেশিরভাগ ঋণই মন্দ।
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে গত বছর কোনো ঋণ শ্রেণীকৃত করার সময়সীমা প্রতি পর্যায়ে বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের নির্দেশনায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। যে কারণে গত বছর রেকর্ড ৫২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়। তবে শুধু এই উপায়ে সীমাবদ্ধ না থেকে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করতে বলা হয়েছে। এজন্য একশ’ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রতিটি ব্যাংকে আলাদা সেল গঠন করতে বলা হয়েছে। আর চলতি বছরের জুনের মধ্যে সব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং পর্যায়ক্রমে তা ৫ শতাংশের নিচে নামানোর নির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত জুন শেষে ৯৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। অনিয়মের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকে বেশি হারে খেলাপি ঋণ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে শতাংশ বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ এখন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের। ব্যাংকটির এক হাজার ৪১০ কোটি টাকা ঋণের ৯৭ দশমিক ৭৬ শতাংশই খেলাপি। এই ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে দেওয়া ঋণ আর আদায় না হওয়ায় এ অবস্থায় পড়েছে।
খেলাপি বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এক সময়ের ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে রূপান্তরিত আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। ব্যাংকটির ৮৪২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৮০ দশমিক ৮২ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। মালিক পক্ষের জালিয়াতির কারণে ২০০৬ সালে ব্যাংকটি অধিগ্রহণ করে মালয়েশিয়াভিত্তিক আইসিবি গ্রুপের কাছে মালিকানা হস্তান্তর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে অনিয়মের ঋণের বড় অংশই আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। খেলাপি ঋণের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নানা অনিয়মের কারণে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটির পরিবর্তিত নাম পদ্মা। এই ব্যাংকের ৫ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ এখন খেলাপি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। ব্যাংকটির ১৪ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা বা ৫১ দশমিক ৫৫ শতাংশ এখন খেলাপি। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ঋণের ৪৭ দশমিক ৭৬ শতাংশই খেলাপি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সরকারি মালিকানার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এক সময়ের শিল্প ঋণ সংস্থা ও শিল্প ব্যাংক মিলে বিডিবিএল হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ব্যাংকটির এক হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা ঋণের ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ খেলাপি। বিশেষায়িত খাতের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৫ হাজার ৭০১ কোটি টাকা ঋণের ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ এখন খেলাপি।
পর্যায়ক্রমে বেশি হারে খেলাপি ঋণ রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক সময় সবচেয়ে ভালো ব্যাংক হিসেবে বিবেচিত জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির ১৪ হাজার ৬ কোটি টাকা বা ২৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট লেদার, বিসমিল্লাহ গ্রুপকে দেওয়া ঋণ আদায় না হওয়ায় বিপাকে রয়েছে ব্যাংকটি। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে আলোচিত সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ। অফশোর ব্যাংকিংসহ নানা অনিয়ম করে ঋণ দেওয়ায় আলোচিত এবি ব্যাংকের ২৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের ৬ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ এখন খেলাপি। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা বা ১৪ শতাংশ। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের ২৪৩ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১৩ দশমিক ৩২ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২২ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বিদেশি মালিকানার হাবিব ব্যাংকের ৩৭৩ কোটি টাকা ঋণের ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ এখন খেলাপি।