আসছে নতুন ‘ডিজিটাল ব্যাংক’

নতুন প্রজন্মের আর্থিক চাহিদা পূরণে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। যার মাধ্যমে যে কেউ ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা নিতে পারবে। ডিজিটাল ব্যাংক যুক্ত থাকবে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশের (এনপিএসবি) সঙ্গে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকের গ্রাহকেরা সহজেই অন্য ব্যাংকের বিভিন্ন সেবাও নিতে পারবেন।

ডিজিটাল ব্যাংক চালুর অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে ব্যাংক এশিয়া। এটি হবে ব্যাংক এশিয়ার একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যার ৫১ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার হবে ব্যাংকটি। বাকি শেয়ারের অংশীদার বিদেশি প্রযুক্তিবিদ, প্রতিষ্ঠান ও লেনদেন প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দিলে আগামী ডিসেম্বরে নতুন ধারার এ ব্যাংক চালু করতে চায় ব্যাংক এশিয়া।

সম্প্রতি এ নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার প্রধান কার্যালয়ে কথা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলীর সঙ্গে। তিনি তুলে ধরেন ব্যাংকটির চালুর উদ্যোগের প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম ব্যাংক শাখায় গিয়ে সেবা নিতে চাইছে না। আগামী প্রজন্ম আরও চাইবে না, যদি ব্যবসায়িক ও করপোরেট লেনদেন না হয়। কেনাকাটায় ই–কমার্স, হোটেল ভাড়া নিতে এয়ার বিএনবি, বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং সেবা প্রায় সব দেশেই চলছে। ব্যাংকেও এমন কিছু সেবা আসা প্রয়োজন। কিন্তু হচ্ছে না। কারণ, ব্যাংকগুলো কঠোর আইনকানুনের মধ্য দিয়ে চলে। গ্রাহকেরা ঘরে বসে যতটা আর্থিক সেবা চাইছেন, ঠিক ততটা আমরা দিতে পারছি না। গ্রাহকদের চাহিদা পুরোপুরি আমরা মেটাতে পারছি না। এ কারণে নতুন ধারার এই ব্যাংক চালুর উদ্যোগ।’

জানা গেছে, ব্যাংক এশিয়ার পরিচালনা পর্ষদ সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য নতুন একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ব্যাংকটি গত ৩০ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার জন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান চালুর অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে ব্যাংকটি।

ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজিটাল ব্যাংকের সেবা অনেকটা পেমেন্ট সার্ভিস ডিরেক্টিভ-২–এর মতো। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর এই নীতিমালা অনুমোদন করে। এরপর ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ এই সেবা চালু করে। পিএসডি-২–নির্ভর সেবায় গ্রাহকের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। গ্রাহকেরা কোন সেবা নেবেন, তা পছন্দ করতে পারবেন। এখন বিভিন্ন সেবার জন্য এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে যেতে হয়। তবে ডিজিটাল ব্যাংকের একজন গ্রাহক সব ব্যাংকের সেবা নিতে পারবেন। যদি বৈদেশিক লেনদেনে সেবা মাশুল কোনো ব্যাংক কম খরচে দেয়, ডিজিটাল ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহক ওই ব্যাংকের সেবা নিতে পারবেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মতো গ্রাহক যেকোনো সেবা পছন্দ করার ও নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

আরফান আলী আরও বলেন, ‘২০০০ সালের পর জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্ম অনলাইননির্ভর। তারা ঘরে বসে গরু কেনে, অনলাইনে চাঁদ দেখে। তাদের তো ধরতে হবে, তাদের আর্থিক চাহিদা মেটাতে হবে। দিন দিন নগদ টাকার ব্যবহার কমে যাচ্ছে। নগদ টাকার ব্যবহার কমে গেলে ব্যাংক শাখা নিশ্চয়ই বাড়বে না। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আমরা শিখেছি, গ্রাহকদের কী কী সেবা ঘরে বসে দেওয়া যেতে পারে। তাই নতুন এই উদ্যোগ।’

গ্রাহকেরা ঘরে বসে যতটা আর্থিক সেবা চাইছেন, ঠিক ততটা আমরা দিতে পারছি না। গ্রাহকদের চাহিদা পুরোপুরি আমরা মেটাতে পারছি না। এ কারণে নতুন ধারার এই ব্যাংক চালুর উদ্যোগ।

আরফান আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যাংক এশিয়া

জানা গেছে, নতুন এই সেবা হবে পুরোপুরি অ্যাপনির্ভর। কিউআর কোড ও এনএফসির মাধ্যমে এই সেবা পাওয়া যাবে। এনএফসি হলো নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে সেবা নেওয়া যায়। ব্যাংক এশিয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হবে ডিজিটাল ব্যাংক। এর ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবে ব্যাংক এশিয়া ও ৪৯ শতাংশ শেয়ারের সিঙ্গাপুরভিত্তিক কিছু প্রবাসী আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি ব্যবসায়ী। এ ছাড়া স্থানীয় টেলিকম অপারেটর ও লেনদেন সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে যুক্ত হবে।

সহজভাবে বললে নির্দিষ্ট একটি ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্টের মাশুল জমা নেওয়া যায়। আপনার সেই ব্যাংকে হিসাব নেই। তাই বাধ্য হয়ে ওই ব্যাংকের লাইনে গিয়ে টাকা জমা দিতে হবে। ডিজিটাল ব্যাংকে হিসাব খুললে আপনি ওই ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট মাশুল জমা দিতে পারবেন। একইভাবে বিভিন্ন পরিষেবা বিল, মাশুল জমা দেওয়া, টাকা স্থানান্তর, কেনাকাটার মতো বিভিন্ন সেবা যুক্ত হবে ডিজিটাল ব্যাংকে।

এখন সময়ের অপেক্ষা। কবে আসবে সেই ডিজিটাল ব্যাংক। কমে আসুক গ্রাহক ভোগান্তি।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ