শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। আজ শুক্রবার তিনি নিজেই সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে আলসারেটিভ কোলাইটিস, অন্ত্রের একটি প্রদাহজনক রোগে ভুগছেন। কিন্তু সম্প্রতি তার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
৬৫ বছর বয়সী শিনজো আবে জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী।
আবের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ায় এখন দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শিনজো আবের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে এলডিপির নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে দেশটির পার্লামেন্টেও ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় দলীয় নতুন প্রেসিডেন্টই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত জাপানের সরকার পরিচালনা করবে আবে এবং তার মন্ত্রিসভা। তবে নতুন কোনো নীতি গ্রহণ করতে পারবে না এই সরকার। এছাড়া দলীয় নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্ট ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলডিপির নেতৃত্ব দেবেন। আবের এই রাজনৈতিক দল ২০২১ সাল পর্যন্ত জাপানের ক্ষমতায় থাকবে বলেও জানা গেছে।
সাধারণত দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এক মাস আগে সময় ঘোষণা করার বিধান রয়েছে।
এই ভোটে তৃণমূলের নেতারা ছাড়াও দলীয় এমপিরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। কিন্তু হঠাৎ করে শিনজো আবে পদত্যাগ করায় এখন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে দলীয় প্রধান নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন যারা
তারো আসো
জাপানের অর্থমন্ত্রী তারো আসো বর্তমানে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। শিনজো আবে নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রথম সারির নেতা ৭৯ বছর বয়সী এই নেতা। আবে পদত্যাগ করায় এলডিপির নেতা কর্মীরা তারো আসোকে অস্থায়ী দলীয় প্রধান হিসেবে বেছে নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে এলডিপির নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন তারো আসো। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা এই দলটির ভাগ্য পুনরুজ্জীবিত করতে তিনি সক্ষম হতে পারেন বলে প্রত্যাশা করছেন অনেকেই।
শিগেরু ইশিবা
জাপানের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এলডিপির নেতা ও আবের সমালোচক ইশিবা। নিয়মিত জরিপে সংসদ সদস্যরা সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। যদিও দলীয় এমপিদের মধ্যে ৬৩ বছর বয়সী এই নেতার জনপ্রিয়তা কিছুটা কম। ২০১২ সালে এলডিপির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বে আবেকে পরাজিত করেছিলেন ইশিবা। সে সময়ে সমর্থনের জন্য দলটির তৃণমূলের নেতাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। তবে দ্বিতীয় পর্বে হেরে যান ইশিবা। এই পর্বে শুধুমাত্র এমপিরা দলীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন।
ফুমিও কিশিদা
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শিনজো আবের নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কিশিদা। তার এই মন্ত্রিত্বের সময় পররাষ্ট্রনীতির লাগাম মূলত প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণেই ছিলো। হিরোশিমার অনেক সাংসদই আবের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে কিশিদাকে ব্যাপকভাবে দেখে থাকেন। তবে ভোটারদের জরিপে একেবারে তলানিতে অবস্থান তার।
তারো কোনো
জাপানের যুদ্ধবিরোধী নেতা হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে ৫৬ বছর বয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারো কোনোর। যুদ্ধকালীন ইতিহাসে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বিরোধের ক্ষেত্রে আবের নেয়া সিদ্ধান্তে দৃঢ় সমর্থন ছিলো তার। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কোনোর ইংরেজিতে ব্যাপক দক্ষতা রয়েছে। এর আগে তিনি দেশটির পররাষ্ট্র ও প্রশাসনিক সংস্কারবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে প্রথম সারিতে এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
ইয়োশিহিদে সুগা
আবের একনিষ্ঠ লেফটেন্যান্ট ৭১ বছর বয়সী এই রাজনীতিদ। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে ব্যাপক টানাপড়েন শুরু হলে মিত্রদের সঙ্গে জোট গড়ে ২০১২ সালে শিনজো আবের ফের ক্ষমতায় ফেরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। দায়িত্ব নেয়ার পর সুগাকে মন্ত্রিসভার মুখ্যসচিব নিয়োগ দেন আবে। সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।