ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে করোনা হাসপাতাল

রোগীশূন্য হয়ে পড়ছে কভিড-১৯ আক্রান্ত   রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলো। গতকাল সারা দেশে করোনা হাসপাতালের সাধারণ শয্যার ৭৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশই ফাঁকা ছিল। রোগী না থাকায় ১২টি কভিড হাসপাতালকে নন-কভিড করার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোগী কমে যাওয়ায় আমরা ১২টি কভিড হাসপাতালকে নন-কভিড হাসপাতালে রূপান্তর করার প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিহাসপাতালগুলো হলো- ঢাকার লালকুঠি মা ও শিশু হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, দুটি বেসরকারি কভিড হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালসহ দুটি হাসপাতাল। ’ তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আজ (গতকাল) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে নন-কভিড করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ওই হাসপাতালের সঙ্গে করোনা রোগী ভর্তির চুক্তি বাতিল করতে বলা হয়েছে। ’ স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, করোনা রোগীদের জন্য দেশের  বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৪টি। এসব শয্যায় গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন ৩ হাজার ৮৪৫ জন। একইভাবে ৫৫০টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রোগী ছিলেন ৩০৬ জন। মোট শয্যার ৭৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং আইসিইউর ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশই ফাঁকা ছিল।

দেশে গতকাল পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫২৮। করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ৩৫১ জন। সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার ১৬ জন। এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন (সুস্থ ও মৃত বাদে) ১ লাখ ২ হাজার ১৬১ জন।হেলথ ইমারজেন্সি অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটের ৮৮৩টি শয্যার মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ২২৬টি। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২০ শয্যার মধ্যে ফাঁকা আছে ১৫৪টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ২৫০ শয্যার মধ্যে ফাঁকা আছে ১১৩ শয্যা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭০ শয্যার মধ্যে ফাঁকা আছে ১৬৫ শয্যা, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৪০ শয্যার মধ্যে ফাঁকা আছে ৯০ শয্যা, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪২০ শয্যার মধ্যে ৩০৯টি শয্যা ফাঁকা আছে। এ ছাড়া লালকুঠি হাসপাতালে ১২১ শয্যার মধ্যে ১১৮টি ফাঁকা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ শয্যার মধ্যে ১১০ শয্যা ফাঁকা।

চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে প্রস্তুতি হিসেবে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালকে কভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্ধারণ করে সরকার। ৮ মার্চ দেশে প্রথম কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়

পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালকে কভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করে সরকার। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকেও অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। অবহেলায় পড়ে থাকা মতিঝিলের রেলওয়ে হাসপাতালটি করোনার জন্য নির্ধারণ করার পর প্রায় দেড় মাস ধরে এটির সংস্কার করা হয়। ১ মে ৩০ শয্যার রেলওয়ে হাসপাতালে শুরু হয় রোগী ভর্তি। আইসিইউর সুবিধা না থাকায় জটিল রোগী এখানে রাখা হতো না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, ১০ জুলাই থেকেই এই হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি নেই। ১৫ আগস্ট থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় শয্যা বাড়াতে মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটকে ২৫০ শয্যার করোনা হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এই হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি না করে বিদেশগামী যাত্রীদের কভিড টেস্ট নমুনা নেওয়ার বুথ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

২৬ জুন প্রথমবারের মতো কভিড হাসপাতালের চার ভাগের তিন ভাগ শয্যা ফাঁকা বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। সেদিন দেশে করোনার সাধারণ শয্যার ৭০ শতাংশ ফাঁকা ছিল। এর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত অধিকাংশ দিন ফাঁকা ছিল ৭০ থেকে ৭৩ শতাংশ শয্যা। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আক্রান্তদের একটি বড় অংশের লক্ষণ ও উপসর্গ থাকে মৃদু। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তাদেরই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের একটা অংশের মৃত্যু হচ্ছে বাড়িতে।

  1. করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার শুরু থেকেই হাসপাতালে সেবার মান নিয়ে নানা অভিযোগ, অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। এতে কভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য খুব গুরুতর না হলে কেউ হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। অনেক ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সামাজিকভাবেও হেনস্তা হতে হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা রোগী না থাকলে শয্যাগুলো ফেলে রাখার প্রয়োজন নেই। কভিড চিকিৎসা তুলে দিলে নন-কভিড রোগীরা চিকিৎসা পাবেন। আবার করোনা রোগীর চাপ বাড়লে এই হাসপাতালগুলোতেই চিকিৎসা শুরু করা যাবে।
শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ