নারায়ণগঞ্জ, ৪ সেপ্টেম্বও, ২০২০ নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা জেমস ক্লাব এলাকার বায়তুল সালাহ জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণে আগুন লেগে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হয়েছেন।
এদের মধ্যে চল্লিশজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং ৩৭জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীদেরকে নারায়নগঞ্জের স্থানীয় ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ওসি) মো: বাচ্চু মিয়া আজ শুক্রবার রাত ১০টা ২০ মিনিটের সময় বাসসকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান,নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদের এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৭জনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের অনেকের অবস্থা আশংকাজনক। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। এদের প্রত্যেকের শরীরের ৫০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। আজ রাতে এশার নামাজের সময় স্থানীয় মসজিদে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো মুসল্লি অংশ নিয়েছিলেন। নামাজের জামাত চলাকালে এ বিস্ফোরণ ঘটে।
মসজিদের ভেতরের এসি বৈদ্যুুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে বিস্ফোরন হতে পারে। এছাড়া মসজিদের ভেতর দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে ধারনা করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মসজিদের প্রবেশ পথে লালাভ পানিতে মিশে আছে ঘটনায় আহতদের রক্ত। মসজিদ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জানালার কাঁচ। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অংশের সাথে বাইরের অংশ যে থাই গ্লাস দিয়ে আলাদা করা হয়েছিলো সেটির ফ্রেম দুমরে মুচরে গেছে। মসজিদের দেয়ালের কোনো কোনো অংশের টাইলস ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে নিচে পড়ে রয়েছে। অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে দগ্ধদের কাপড়। মসজিদের ছয়টি এসি’র একটিও অক্ষত নেই। প্রতিটিতেই বিস্ফোরনের চিহ্ন রয়েছে। ফ্যানগুলির বেশিরভাগের পাখাই বাঁকা হয়ে গেছে।
ঘটনার সময় মসজিদের অল্প দূরে ছিলেন অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, আটটায় এশার আজান হয়। সোয়া আটটায় জামাত। এর মধ্যে দু’বার বিদ্যুত আসা-যাওয়া করে।। দ্বিতীয়বার বিদ্যুত গিয়ে আসার পরপরই প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরন হয়। ‘মাগো বাবাগো’ চিৎকার শোনা যায়। মসজিদের বাইরে বৃষ্টির পানি জমে ছিলো। কয়েকজনকে মসজিদ থেকে বের হয়ে সেই পানিতে গড়াগড়ি দিতে দেখা গেছে। তাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশে চামড়া নেই। শরীরের কাপড় পুড়ে গেছে। এলাকাবাসি দৌড়ে এসে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ও নগরীর মন্ডলপাড়া নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপতালে নিয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পিয়ন নুরুদ্দিন জানান, তার দুই ছেলে সোহেল (২০) ও জুয়েল (২২) নামাজ পড়তে গিয়েছিলো। দু’জনকেই পাচ্ছেন না। তাদের খুঁজতে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ফটো সাংবাদিক নাদিম (২৮) গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন। আশংকাজনক অবস্থায় নাদিমকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে নেয়া হয়েছে।
পাশের খানপুর সর্দারপাড়া পাঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় জলিল (৫০) নামের একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার গোলাম মোস্তফা জানান, হাসপাতালে চল্লিশজন দগ্ধ এসেছিলেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, প্রাথমিক তথ্যে ধারনা করছি মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইনের লিকেজের কারনে মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমে যায়। এসময় এসিতে শর্ট সার্কিট হয়ে মসজিদের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঘটনার আসল কারন আরো অনুসন্ধানের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে।