কভিড-১৯-এর প্রভাবে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন দেশের শহরাঞ্চলের ৬৬ শতাংশ কর্মী। গ্রামাঞ্চলে এ কর্মসংস্থান হারানোর হার ৪১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ‘লুজিং লাইভলিহুড: দ্য লেবার মার্কেট ইমপ্যাক্টস অব কভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত মহামারীতে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোও। অর্থনীতির নিষ্ক্রিয়তায় এসব দেশে সংকুচিত হয়ে এসেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। এরই প্রতিফল দেখা গিয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনার কারণে কর্মসংস্থান হারানোর দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ঢাকা বিভাগ। মহামারীর কারণে এ বিভাগের শহরগুলোয় প্রতি চারজন কর্মীর প্রায় তিনজনই (৭৪ শতাংশ) চাকরি হারিয়েছেন। অন্যদিকে এ বিভাগের গ্রাম অঞ্চলে চাকরি হারিয়েছেন ৪৫ শতাংশ।
শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থান হারানোর দিক থেকে ঢাকা বিভাগের পরই রয়েছে সিলেট বিভাগ। করোনার প্রভাবে এ বিভাগের শহরাঞ্চলের ৬৬ শতাংশ কর্মী এ বছর চাকরি হারিয়েছেন। বিভাগটির গ্রামাঞ্চলে চাকরি হারিয়েছেন ৩৯ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের শহরাঞ্চলে ৫৪ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলে ৪৭ শতাংশ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।
এর বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগের শহর ও গ্রামাঞ্চলের কর্মীদের মধ্যে যথাক্রমে ৬৩ ও ৪৪ শতাংশ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। এছাড়া খুলনা বিভাগের শহরাঞ্চলে ৫৯ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলে ৩৯ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগের শহরাঞ্চলে ৬১ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলে ৩৫ শতাংশ এবং রংপুর বিভাগের শহরাঞ্চলে ৫৮ ও গ্রামাঞ্চলে ৩৭ শতাংশ মানুষ তাদের কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংক বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা পরিস্থিতি প্রকট হলে দারিদ্র্য বাড়বে। এ অঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। করোনা মহামারী তাদের স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় খাবারের মূল্যবৃদ্ধিরও ঝুঁকি রয়েছে। দেশগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের ভারসাম্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অন্যদিকে ব্যক্তিপর্যায়ের ভোগ ব্যাপকভাবে কমায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানাগুলো। ফলে সামনের দিনগুলোয় আরো মানুষ কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জীবনযাত্রায় কর্মসংস্থান হারানোর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, চাকরি হারানোজনিত অর্থনৈতিক অভিঘাতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শহর এলাকার ৬৯ শতাংশ মানুষ তাদের খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দেবে। বন্ধু-বান্ধবের কাছে সহযোগিতার জন্য হাত পাততে পারে ৬৯ শতাংশ মানুষ। সঞ্চিত অর্থ ব্যয়ে বাধ্য হবে ৪২ শতাংশ মানুষ। সরকারি সহযোগিতা নেবেন ৩৮ শতাংশ। একাধিক কাজে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে উদ্যোগী হবে ৯ শতাংশ। ঋণ নিয়ে সংকট কাটানোয় প্রয়াস হবে ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে কর্মসংস্থান বিনষ্টজনিত অভিঘাত কাটাতে গ্রামাঞ্চলের ৬৩ শতাংশ মানুষ খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দেবে। বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সহায়তা নেয়ার প্রবণতা দেখা দেবে ৫০ শতাংশ মানুষের। সঞ্চিত অর্থ ব্যয়ে বাধ্য হবে ৫৫ শতাংশ মানুষ। সরকারি সহযোগিতা নেবে ৩৩ শতাংশ। ২০ শতাংশ মানুষ একাধিক কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে উদ্যোগী হবে। ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে ২২ শতাংশ।