বায়ু দূষণে এক বছরে ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু: গবেষণা

দীর্ঘমেয়াদী বায়ু দূষণের সংস্পর্শে থাকার ফলে বিশ্বজুড়ে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ ও নতুন রোগে ২০১৯ সালে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে সম্মিলিতভাবে চীন (১৮ লাখ) এবং ভারতে (১৬ লাখ)। বুধবার প্রকাশিত স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০২০ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বে ৪ লাখ ৭৬ হাজার নবজাতক মারা গেছে। তাদের জন্মের মাত্র এক মাস সময়ের মধ্যে ভারতেই মারা গেছে এক লাখ ১৬ হাজারের বেশি নবজাতক। আর আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে এই সংখ্যা ২ লাখ ৩৬ হাজার। গবেষকরা বলেছেন, তারা গর্ভাবস্থায় মায়েদের বায়ু দূষণের সংস্পর্শে আসার তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। এতে তারা দেখতে পেয়েছেন, বায়ু দূষণের কারণে গর্ভের সন্তানের আকৃতি অত্যন্ত ছোট (জন্মের সময় কম ওজন) হয়ে যায় অথবা অকাল জন্মের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তারা বলেছেন, বায়ু দূষণের কারণে সৃষ্ট এসব বিষয় গুরুতর জটিলতা এবং নবজাতকের মৃত্যুর জন্য বেশি দায়ী। এ ধরনের মৃত্যুর শতকরা কত ভাগ পরিবেশ এবং গৃহস্থালির বায়ু দূষণের কারণে হচ্ছে সেবিষয়ে নতুন এই বিশ্লেষণে অনুমান করেছেন গবেষকরা। হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ড্যান গ্রিনবাম বলেছেন, একজন শিশুর স্বাস্থ্য প্রত্যেক সমাজের ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর বিষয়। নতুন এই গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের উচ্চ ঝুঁকির ইঙ্গিত মিলেছে। গবেষকরা বলছেন, গত বছর বিশ্বজুড়ে বায়ু দূষণের কারণে ৬৭ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর জন্য উচ্চ রক্ত চাপ, তামাকের ব্যবহার এবং ডায়েটের ঝুঁকির পর চতুর্থ বৃহত্তম কারণ বায়ু দূষণ।

বায়ুদূষণের জন্য ভারতে গত বছর কোন কোন রোগে মৃত্যুর হার ছিল কতটা রিপোর্টে তা-ও জানানো হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৬০ শতাংশ ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজঅর্ডার (সিওপিডি)-এ। ৪৩ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে লোয়ার রেসপিরেটরি ইনফেকশনে। ৩৫ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে ইসকিমিক স্ট্রোকে আর ৩২ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার ও অন্যান্য হৃদরোগ। যা আরও উদ্বেগের তা হল, বায়ুদূষণ ভারতে শিশুমৃত্যুরও অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। রিপোর্ট জানাচ্ছে ঘরে ও বাইরের বায়ুদূষণের জন্য গত বছর ২১ শতাংশ সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যাটা ১ লাখ ১৬ হাজার। গর্ভাবস্থায় থাকা মহিলারা বায়ুদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তার খেসারত দিতে হচ্ছে সদ্যোজতদের। জন্মের সময় শিশুদের ওজন নির্ধারিত মানের অনেক কম হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শিশুদের জন্ম হচ্ছে। তার ফলে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা নিয়েই জন্ম হচ্ছে শিশুদের। হেল্থ এফেক্টস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ড্যান গ্রিনবওম বলেছেন, ‘শিশুস্বাস্থ্যই সমাজের ভবিষ্যত। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং সহরা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকার দেশগুলির শিশুরাই বায়ুদূষণের শিকার বেশি হচ্ছে।’

এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে ভারতে প্রতি ৮টি স্বাভাবিক মৃত্যুর ১টিরই কারণ বায়ুদূষণ। ২০১৭ সালে ৭০ বছর বয়সের কম যাদের মৃত্যু হয়েছিল (১২ লক্ষ ৪০ হাজার জন) ভারতে তাদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল বায়ুদূষণ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৯, এই ১০ বছরে যখন বিশ্বের অন্যত্র দূষণকণা (পিএম ২.৫)-র সঙ্গে জনসংখ্যার সংস্পর্শ কিছুটা হলেও কমার ইঙ্গিত মিলেছে তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, ওশিয়ানিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলিতে তা প্রতি ঘন মিটার বাতাসে সাড়ে ৬ গ্রাম মাইক্রোগ্রাম করে বেড়ে গিয়েছে গত এক দশকে। প্রায় একই অবস্থা বাংলাদেশ ও নাইজিরিয়ার। তবে চিন, তুরস্ক, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও ইরানে পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা ভাল হয়েছে। সূত্র: এএফপি, টিওআই।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ