কোটি টাকা বঞ্চিত হচ্ছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় দেশের সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থা বারবার তাগিদ দিলেও ধরা দিচ্ছে না ভার্চুয়াল দুনিয়ার এসব প্রতিষ্ঠান।
দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের হারও বাড়ছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড সার্ভিসেস (বেসিস) এবং বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর মতে, দেশীয় কোম্পানিগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপনে বছরে দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করছে। এসব বিজ্ঞাপন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট ভিত্তিক কোম্পানি ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ আরও কিছু আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। এ ছাড়া ডোমেইন, হোস্টিং ও সার্ভার বিক্রি থেকেও অ্যামাজন, গোড্যাডিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি প্রতিবছর বড় অঙ্কের অর্থ আয় করছে। এই আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ও উৎসে করসহ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে নূ্যনতম ৩০০ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আয় হওয়ার কথা। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেও তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা যাচ্ছে না।
এদিকে এসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন থেকে আয় বাড়াতে তাদের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ক্যাম্পেইনে পাঠালেও রাজস্ব দেওয়ার ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন না। একাধিক অনুষ্ঠানে গুগলের প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করলেও নীতিগত অবস্থানের দোহাই দিয়ে তারা কোনো তথ্য দেননি। তবে গুগল ও ইউটিউবকে ধরা না গেলেও ফেসবুকের বাংলাদেশ এজেন্ট এইচটিটিপুল গত আগস্টে ৯১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) এনবিআরে জমা দিয়েছে। এনবিআরকে যে হিসাব এইচটিটিপুল দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক আগস্ট মাসে ছয় কোটি ২৩ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন বিক্রি করেছে। তবে ফেসবুকসহ অন্যান্য বিদেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে অন্তত ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছে। হাইকোর্টের পাঁচ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংশ্নিষ্ট কোম্পানিগুলোকে পরিশোধিত অর্থ থেকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব ধরনের ট্যাক্স, ভ্যাট এবং অন্যান্য রাজস্ব আদায় করতে হবে। ফলে এ নির্দেশনার আলোকে বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশ থেকে আয়ের ওপর তাদের ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হবে।
ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের বিষয়ে আদালতে রিটকারী আইনজীবীরা বলছেন, ইন্টারনেট ভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠান বলে থাকে, বাংলাদেশ থেকে আয়ের ওপর তারা সিঙ্গাপুরে কর পরিশোধ করছে। সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি রয়েছে, এই চুক্তির আওতায় তারা সিঙ্গাপুরে অফিস চালু করে বাংলাদেশে সেবা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাসুম বলেন, তারা সিঙ্গাপুরে ভ্যাট দিতে পারে। সেটা তাদের বিষয়। তবে তাদের অবশ্যই আমাদের এখানেও ভ্যাট দিতে হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক এসব প্ল্যাটফর্মকে কীভাবে করের আওতায় আনা হবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের কথা জানাতে পারেননি এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
এদিকে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাট-ট্যাক্স না দিলে আন্তর্জাতিক এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুবিধা বন্ধ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে রাজস্ব বোর্ড উদ্যোগ নিতে পারে।
এ বিষয়ে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, বিদেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান নিশ্চিতে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানি হওয়ায় এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানে আসতে পারে। এতেও সমাধান না হলে বাংলাদেশ থেকে এসব মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ সংকোচনের কথা ভাবা যেতে পারে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সমকালকে বলেন, ‘ফেসবুক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি। বাংলাদেশে তাদের কোনো বিনিয়োগ নেই, অফিস নেই। তারা (গুগল-ইউটিউব) ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিতে এসব খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছে। এগুলো ধোপে টিকবে না। নিয়ম অনুযায়ী তাদের কাছে পাওনা ভ্যাট-ট্যাক্স অবশ্যই শোধ করতে হবে। এ বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’