দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারের নির্দেশনায় শুরু হওয়া ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনের পঞ্চম দিন ছিল গতকাল রবিবার। এবার স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুবই কঠোর অবস্থান নেবে বলে আগে থেকেই বলা হচ্ছিল সরকারের তরফ থেকে। তাই লকডাউন শুরু হওয়ার পর প্রথমদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল আইনি বেড়াজালের ভয়। সচেতনতাও ছিল অল্পবিস্তর। কিন্তু লকডাউনের এক একটি দিন যাচ্ছে আর ঢিলেমিও বাড়ছে জনসচেতনতায়; উবে যাচ্ছে আইনি জালের ভয়। নানা রকম সমালোচনার কারণে পুলিশের ‘কঠোর অবস্থানে’ও কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে- একদিকে রাস্তাঘাটে মানুষ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে যান চলাচলও। অথচ করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বরং আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইতিবাচক সংকেত মিলেছে। আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর পর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর আগামীকাল মঙ্গলবারই লকডাউন বাড়ানো সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার।দেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু গত তিন দিন ধরে শত ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল রেকর্ড ১০২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে একদিকে যখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত, অন্যদিকে তখন নিম্নআয়ের মানুষজনও উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে। অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে, কর্মহীন গৃহবন্দি দশা ফেলে বেরিয়ে আসছে রাস্তায়।
গতকাল দুপুরে শান্তিনগর, পল্টন, মালিবাগ, মগবাজার, সাতরাস্তাসহ কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কাজে বের হয়েছেন মানুষ। রিকশার সংখ্যাও বেড়েছে। মোড়ে মোড়ে গাড়ির জটলাও দেখা গেছে। মগবাজার, মৌচাকসহ মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে ‘সিগন্যাল’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের রুটিরুজি একেবারেই বন্ধ। ঘরে খাবার নেই। অর্থনীতিও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবুও দেশের সব মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা। লকডাউন ছাড়া করোনা সংক্রমণ রোধের অন্য কোনো উপায় নেই বলেই মনে করছেন তারা। সূত্রমতে, আরও এক সপ্তাহ লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পরও যদি করোনার সংক্রমণ না কমে, তাহলে আরও বাড়তে পারে লকডাউন-কাল। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু শর্তজুড়ে দেওয়া হতে পারে। পুনরায় বাড়ানো হতে পারে। অর্থাৎ কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে ও গণপরিবহন চালু করে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা হতে পারে।
আরও এক সপ্তাহের লকডাউন আসছে
১৯ এপ্রিল ২০২১ ০০:০০ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ১০:২৬
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারের নির্দেশনায় শুরু হওয়া ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনের পঞ্চম দিন ছিল গতকাল রবিবার। এবার স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুবই কঠোর অবস্থান নেবে বলে আগে থেকেই বলা হচ্ছিল সরকারের তরফ থেকে। তাই লকডাউন শুরু হওয়ার পর প্রথমদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল আইনি বেড়াজালের ভয়। সচেতনতাও ছিল অল্পবিস্তর। কিন্তু লকডাউনের এক একটি দিন যাচ্ছে আর ঢিলেমিও বাড়ছে জনসচেতনতায়; উবে যাচ্ছে আইনি জালের ভয়। নানা রকম সমালোচনার কারণে পুলিশের ‘কঠোর অবস্থানে’ও কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে- একদিকে রাস্তাঘাটে মানুষ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে যান চলাচলও। অথচ করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বরং আরও এক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইতিবাচক সংকেত মিলেছে। আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর পর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর আগামীকাল মঙ্গলবারই লকডাউন বাড়ানো সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার।
দেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু গত তিন দিন ধরে শত ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল রেকর্ড ১০২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে একদিকে যখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত, অন্যদিকে তখন নিম্নআয়ের মানুষজনও উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে। অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে, কর্মহীন গৃহবন্দি দশা ফেলে বেরিয়ে আসছে রাস্তায়।
গতকাল দুপুরে শান্তিনগর, পল্টন, মালিবাগ, মগবাজার, সাতরাস্তাসহ কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কাজে বের হয়েছেন মানুষ। রিকশার সংখ্যাও বেড়েছে। মোড়ে মোড়ে গাড়ির জটলাও দেখা গেছে। মগবাজার, মৌচাকসহ মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে ‘সিগন্যাল’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের রুটিরুজি একেবারেই বন্ধ। ঘরে খাবার নেই। অর্থনীতিও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবুও দেশের সব মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা। লকডাউন ছাড়া করোনা সংক্রমণ রোধের অন্য কোনো উপায় নেই বলেই মনে করছেন তারা। সূত্রমতে, আরও এক সপ্তাহ লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পরও যদি করোনার সংক্রমণ না কমে, তাহলে আরও বাড়তে পারে লকডাউন-কাল। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু শর্তজুড়ে দেওয়া হতে পারে। পুনরায় বাড়ানো হতে পারে। অর্থাৎ কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে ও গণপরিবহন চালু করে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, লকডাউন বাড়ানোর সুপারিশ আছে। এ বিষয়ে সোমবার সভায় সিদ্ধান্ত হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন হবে।
করোনার এমন ভয়াল থাবা নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। পরে এ বিধিনিষেধ আরও দুদিন বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে টানা আট দিনের কঠোর লকডাউনে যায় দেশ। তবুও করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। ফলে নতুন করে লকডাউন আরও বাড়ানোর পথে হাঁটছে সরকার। আজ সোমবার সভায় সিদ্ধান্তের পর হয়তো আগামীকাল এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় গত বছরের ১৮ মার্চ। এরপর সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ২৬ মার্চ থেকে এক সপ্তাহের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সাধারণ ছুটির মোড়কে কার্যত চলা লকডাউন তখন একে একে ছয় দফা বেড়ে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটিতে ছিল দেশ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে ফের করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। গতকাল রেকর্ড ১০২ জনসহ গত তিন দিনে ৩০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।