মোস্তঅনলাইন মার্কেট প্লেস ‘ইভ্যালি’র বিরুদ্ধে গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই ই-মার্কেট প্লেসটি ২৪ ঘণ্টায় পণ্য ডেলিভারি দেবে বললেও বাস্তবচিত্র উল্টো। এক দিনের কথা বলে দুই মাসেও তারা অর্ডারের পণ্যটি দিতে পারে না। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ‘আর কিছু সময় দিয়ে সহায়তা করুন, পণ্যটি পাবেন’ বলে গ্রাহককে ঘুরাতে থাকে। এমনকি শেষপর্যন্ত পণ্য দিতে না পারলে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু সেই টাকার জন্যও প্রায়ই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
ইভ্যালির বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন বরিশাল সদরের মিরন হাওলাদার। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সাইক্লোন অফারে একটি মোটরসাইকেল অর্ডার করেছিলেন গত ২৯ জানুয়ারি। এ জন্য ১ লাখ ১১ হাজার ১৩৪ টাকা পরিশোধও করেন। কিন্তু চার মাস ১১ দিন পার হয়ে গেলেও সেই মোটরসাইকেল হাতে পাননি তিনি। অথচ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যেই পণ্যটি সরবরাহের কথা ছিল। মিরন বলেন, গত চার মাসে অন্তত ৭০ বার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন করেছি। শতাধিকবার তাদের ফেসবুক পেজে মেসেজ করে জানতে চেয়েছি। কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দেয়নি।
মিরনের মতো অনেকে মোটরসাইকেলের টাকা পরিশোধ করে দীর্ঘদিন পরও সেই পণ্য হাতে পাননি। তারা বলছেন, অগ্রিম পরিশোধ করা টাকা ইভ্যালি ফেরত দেবে কি না, তাও স্পষ্ট করছে না কর্তৃপক্ষ। শুধু মোটরসাইকেল নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরবরাহের কথা থাকলেও গত মার্চে অর্ডার করা খাসির মাংস এখনও হাতে পাননি রামপুরার ফরিদ আহমেদ। মাংসের সঙ্গে অর্ডার করেছিলেন সয়াবিন তেলও। কিন্তু কিছুই পাননি তিনি। এ ছাড়া রমজানে খেজুরের অফার দেখে অর্ডার করে টাকা পাঠান। অথচ টাকা পাওয়ার পরদিনই সেই অফার বন্ধ করে দেয় ইভ্যালি। আবেদন করেও সেই টাকা ফেরত পাননি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাগ অর্ডার করে এখনও তা পাননি পুরান ঢাকার শুভ। পারফিউম অর্ডার করেছিলেন ৩ এপ্রিল। এখনও পাননি। তবে এর আগে খিমার অর্ডার করে পেয়েছেন ১২৬ দিন পর। শুভ বলেন, ইভ্যালি শুধু ঘুরায়। তাগাদা না দিলে সেই পণ্য পাওয়া কঠিন। মেসেজ করলে ফিরতি মেসেজ দেয়, কিন্তু পণ্য দেয় না। এভাবে পেরিয়ে গেছে এক মাস। একই অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সদরের ব্যবসায়ী আজাদ, জামালপুরের সরিষাবাড়ীর জাহেদুল ইসলামসহ অনেকে।
গত ৯ জুন এক গ্রাহক ইভ্যালির ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, তিনি ইভ্যালির সাইক্লোন অফার দেখে একটি ছাতা অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু ৪ মাসেও পাননি।
আল জোবায়ের ফাহিম নামের একজন ইভ্যালির একটি প্রোডাক্টের ইভিএল নম্বর দিয়ে লিখেছেন, ‘অর্ডারের পর এই প্রোডাক্টটি তারা সরবরাহ করেনি। বলেছে, টাকা ফেরত দেবে। কিন্তু টাকা পাইনি।’ নাজিম উদ্দিন নাজিম লিখেছেন, ‘চার মাসেও পণ্য হাতে পেলাম না, আপনারা একই কথা বারবার বলছেন। আর কত অপেক্ষা করব!’
প্রকৌশলী শরিফ রাজ লিখেছেন, ‘দুই মাস হলো রিফান্ড দেওয়ার কথা। এখনও সেই টাকা পেলাম না। আমার টাকা মাইর দেওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি ইভ্যালি?’
গ্রাহকের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর ইভ্যালির ব্যবস্থাপক (পিআরও) মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে অন্য এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
এরপর ইভ্যালির প্রধান মার্কেটিং অফিসার আরিফ আর হোসেন মোবাইল ফোনে সময়ের আলোকে বলেন, ‘খাসির মাংস ও খেজুর নিয়ে এমন হওয়ার কথা নয়। আমরা প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখ গ্রাহককে সেবা দিচ্ছি। পণ্য সরবরাহ বেড়েছে। আমরা চেষ্টাও করছি। একটু সময় লাগছে। আমাদের চেষ্টায় ঘাটতি নেই। প্রতিদিন ভোক্তা অধিকারেও যাচ্ছি। আমরা চাই না, কেউ মন খারাপ করুক।ফা ইমরুল কায়েস