দেশের বিভিন্ন জেলায় এক শিশুসহ তিন স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এক তরুণী হয়েছেন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার। এ ছাড়া এক শিশু, এক গৃহবধূ ও এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। রাজবাড়ী, বগুড়া, নওগাঁ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও মৌলভীবাজারে এসব ঘটনায় পৃথক থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ছয় অভিযুক্ত।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পৃথক স্থানে জিনের সাহায্যে ধনী বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে সবুর প্রামাণিক (৫৫) নামের এক ভণ্ড সাধুর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবুর উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের প্রাণপুর গ্রামের মৃত ভোলা প্রামাণিকের ছেলে।
গত মঙ্গলবার এক ভুক্তভোগীর বাবা এবং আরেক ভুক্তভোগীর বোন বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেছেন।
ওই দুই শিক্ষার্থী জানায়, গত মাসের শেষ দিকে সবুর এক ভুক্তভোগীকে বাড়ির পাশের তালগাছের নিচে যেতে বলে তাকে ধর্ষণ করেন। পরিবারকে জানালে জিনের ভয় দেখিয়ে তাকে চুপ থাকতে বলেন। আরেক ছাত্রী তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাকেও একই ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন সবুর।
পাংশা থানার ওসি মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন জানান, সবুর পলাতক রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার বালিয়াকান্দি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।
তিনি জানান, গত ১০ জুন দুপুরে পাটক্ষেতে ঘাস কাটতে গেলে আগপোটরা গ্রামের মৃত বসন্ত সিংহের ছেলে কার্ত্তিক চন্দ্র সিংহ (৫০) তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগীর চিৎকারে অন্যরা এগিয়ে এলে তাঁকে মারধর করেন কার্ত্তিক।
বালিয়াকান্দি থানার ওসি তারিকুজ্জামান জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় নিজ ঘরে আটক রেখে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বিপুল হোসেন (২৭) নামের এক পরিবহন শ্রমিকের বিরুদ্ধে। এ সময় ভুক্তভোগীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে বিপুলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। তিনি উপজেলার আড়কাটিয়া গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধুনট থানার এসআই আব্দুস ছালাম জানান, গতকাল অভিযুক্তকে ওই মামলা গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভুক্তভোগীকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মহাদেবপুর, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার স্বরূপপুর নিচপাড়া এলাকায় এক স্কুলছাত্রীকে (১৫) শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রাম্য মাতবররা খোদাবক্স (৪৪) নামের এক ব্যক্তিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এ ছাড়া শাস্তি হিসেবে তাঁকে তিনটি থাপ্পড় মারা হয়। খোদাবক্স উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের স্বরূপপুর নিচপাড়া গ্রামের মৃত বিশুর ছেলে।
গ্রামবাসী ও সালিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুন বিকেলে ওই কিশোরী বাড়িতে একা ছিল। তখন খোদাবক্স বাড়িতে ঢুকে তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে খোদাবক্স পালিয়ে যান।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চট্টগ্রামে এক তরুণীকে বিয়ে এবং চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। গত মঙ্গলবার অভিযুক্তদের বাকলিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়।
অভিযুক্তরা হলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ছনুয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (২৭), মো. ইজ্জত আলীর ছেলে মো. নুরুল আজিম (২৮), পূর্ব চাম্বল গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে মোহাম্মদ নবী (২২) ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা এলাকার ফরিদ আহম্মদের ছেলে মো. জাবের আহাম্মদ (৪৮)।
র্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার জানান, গত ১৩ জুন ভুক্তভোগীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকার একটি বাসা থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন।
বরিশাল অফিস জানায়, জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে পাদ্রীশিবপুর মাদরাসার পরিচালক রেদওয়ানুল করীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল সকালে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়।
বাকেরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, রেদওয়ানুলের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এক ভুক্তভোগীর বাবা মঙ্গলবার বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পৌর এলাকার নছরতপুর জামে মসজিদের ইমাম শফিকুল ইসলামকে (৪২) শিশু (১১) নির্যাতনের অভিযোগে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার ওই ইমামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বাড়ি চুনারুঘাট থানার গোলগাঁও গ্রামে।
অভিযোগকারীর মামলার সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে মসজিদে পড়তে গেলে ভুক্তভোগী শিশুকে নিজের ঘরে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন শফিকুল। পরে ভুক্তভোগী বাড়িতে গিয়ে জানালে তাঁর বাবা ইমামের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ইমাম।
কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।