শামীম খান,
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগে থেকেই সাংগঠনিকভাবে দলকে প্রস্তুত রাখবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও নিরসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এই কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই মুহূর্তে দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যে সমস্ত জেলা, উপজেলা, মহানগরে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বন্দ্ব রয়েছে সে সব সমস্যাও দ্রুত মিটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সাসনে রেখে দলকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধাকরা। ইতোমধ্যেই এই প্রক্রিয়াগুলো শুরু করা হয়েছে বলেও তারা জানান।
গত ১১ জুন আওযামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় দলের সাংগঠনিক বিষয় ও অভ্যন্তরীণ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলাসহ উপজেলাগুলোতে যেখানে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সাংগঠনিক সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে আট বিভাগে দলের যে ৮টি কেন্দ্রীয় টিম দায়িত্বে রয়েছে সে টিমগুলোকে তিনি সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা, উপজেলা পর্যায়ে যেখানে সাংগঠনিক সমস্যা রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেন্দ্রীয় টিমগুলো নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে সংশ্লিষ্ট কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে সম্মেলন ও কমিটি গঠন করা হবে। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত এক বছর সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। গতানুগতিক কিছু কাজ ছাড়া সংগঠনিক কোনো কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় যে টিমগুলো রয়েছে সে টিমগুলোও করোনার কারণে মাঠে নেমে কাজ করতে পারেনি। এর ফলে সংগঠন যেমন ঝিমিয়ে পড়ায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বও রয়ে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় এসব দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় দ্বন্দ্ব নিরসনেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। করোনা পারিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে দ্রুতই জোরেসোরে মাঠে নেমে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হবে বলে ওই নেতারা জানান।
তবে ইতোমধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিভিন্ন জেলার নেতাদের ঢাকা এনে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ, কক্সবাজার, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ, ফেরী, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, পাবনা জেলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। শনিবার (১৯ জুন) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা, ২০ জুন চট্টগ্রাম মহানগর নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা আলোচনা করবেন। পর্যায়ক্রমে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে নেতারা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাংগঠনিক সফর শুরু করেছি। কোভিডে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা শুরু থেকেই মানুষের পাশে রয়েছেন। মানুষের জন্য রাজনীতি, সেই মানুষের সেবা আমরা করতে পারছি। এখন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সংগঠনকে আরও সক্রিয় ও গতিশীল করতে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছি। নির্বাচনের জন্য সংগঠনকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখাই এখন লক্ষ্য।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা তো কাজের মধ্যেই আছি, প্রতিদিনই জেলার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের ডেকে কথা বলছি। যেখানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে সেখানকার নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। বিষয়টি তো আর একদিনে শেষ হয়ে যায় না, সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের ৩টি জেলা ও ২৬টি উপজেলার সম্মেলন করা হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপকহারে শুরু হওয়ায় সম্মেলন স্থগিত রেখেছিলাম। আশা করছি, আগামী অক্টোবরের মধ্যেই সব সম্মেলন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবো।