দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে প্রাণহানির সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৪৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে করোনায় মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়ালো ১৪ হাজার ৬৪৬ জনে।
সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৩০১ জন। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন।
এর আগে রোববার দেশে ১১৯ জন মারা যায়। যা ছিল সর্বোচ্চ। সবমিলিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৬৪৬। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৮৩০১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন দেশে সর্বোচ্চ ৮৮২২ জন করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এনিয়ে দেশে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯।
পরীক্ষা কম হওয়ায় সংক্রমণ কিছুটা কমলেও বেড়েছে শনাক্তের হার। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। সরকারি হিসেবে ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৬৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৯১৩ জন। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কোভিড সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সারাদেশে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউনের শুরুর দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ, র্যাবসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখা গেছে সকাল থেকেই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল সেনাবাহিনীর সদস্যদের গাড়ি নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে।
এবারের লকডাউন বাস্তবায়নে ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ের কার্যকর টহল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন রয়েছে।
সীমান্তবর্তী জেলায় ভয়াবহ থাবা বসিয়েছে করোনা। বিশেষ করে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলায় এটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খুলনা বিভাগে একদিনে রেকর্ড ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী ও আশেপাশের জেলাগুলোতে সংক্রমণের গতি উর্ধ্বমুখী। ঢাকার হাসপাতালগুলো প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। বেশিরভাগ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। রাজবাড়ীতে শনাক্তের হার ৫৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। লালমনিরহাটে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৭৬ শতাংশ। নড়াইলে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত বছর ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু হয়। এরমধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে এপ্রিল মাসে দেশে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ জন রোগী শনাক্ত হয়। ওই মাসে সর্বোচ্চ ৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২৮ টি নমুনা পরীক্ষা হয়। সর্বোচ্চ মৃত্যুও হয় এপ্রিলেই। ওই মাসে ২৪০৪ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় করোনা। দেশে করোনায় ৩ আগস্ট সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। ৩০ জুন সর্বোচ্চ ৩৭০৮৬ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ওইদিনেই সর্বাধিক ৩৫১০৫ টি নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড ৮৮২২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৬৬টি ল্যাবে ৩২ হাজার ৫৫ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮২ টি নমুনা। এই পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক শূন্য ৮ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের ৯০ জন পুরুষ আর নারী ৫৩ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১০৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে ও ১১ জন বাড়িতে মারা যান। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৭০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৪২ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ১১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন এবং শূন্য থেকে ১০ বছরে মধ্যে ছিলেন একজন। মৃতদের মধ্যে ৩৫ জন ঢাকা বিভাগের, ১৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১৯ জন রাজশাহী বিভাগের, ৪৬ জন খুলনা বিভাগের, আটজন বরিশাল বিভাগের, সিলেট বিভাগে সাতজন, ১০ জন রংপুর বিভাগের ও তিনজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।