তরুণ প্রজন্ম ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার

তরুণ প্রজন্ম ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার

বর্তমান সময়কে বলা হয়ে থাকে প্রযুক্তির সোনালি যুগ। প্রযুক্তি কল্যাণে পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়। দিনদিন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে সর্বক্ষেত্রে। কিছুকাল আগে যেসব বিষয় মানুষের ভাবনারও অতীত ছিল, সেই সব বিষয় আজ বাস্তবে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও হাঁটছে ডিজিটালাইজেশনের পথে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো প্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে স্বল্প সময়ে অধিক কাজ করা সম্ভব।

নতুন প্রজন্ম বনাম নতুন প্রযুক্তি

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, আগে গ্রামবাংলার মানুষ গরু দিয়ে হালচাষ করত। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে ট্রাক্টর ও পাওয়ারটিলার আসায় গরু দিয়ে হালচাষের অর্ধেক সময়ে দ্বিগুণ জমি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়া যে শুধু দেশের কৃষিতেই লেগেছে এমনটি নয়, প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে দেশের সর্বক্ষেত্রে। দেশ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় উন্নয়নের দৌড়ে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। তবে দেশকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করতে হলে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে দেশের তরুণ সমাজকেই।

ইন্টারনেটের অপব্যবহার

তবে বর্তমানে সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজের একটি বৃহত্ অংশ ঝুঁকে যাচ্ছে প্রযুক্তির কালো ছায়ার দিকে। প্রযুক্তির উন্নতির কল্যাণে দেশের সর্বত্র এখন ইন্টারনেটভিত্তিক সব সেবা সহজলভ্য হয়ে গেছে। প্রযুক্তির এই সেবা আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ এলেও প্রযুক্তির অপব্যবহার সুস্পষ্ট হয়েছে করোনা মহামারির সময়ে। ঘরবন্দি সময়ে ইন্টারনেটে আসক্তি বেড়েছে বহুগুণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে এই সমস্যা আরো প্রবল হয়েছে। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে এসব শিক্ষার্থী বাসায় অলস সময় পার করছে। তারা সারা দিন মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে থাকে। আর ইন্টারনেট দুনিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকার নতুন মন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে অনলাইনভিত্তিক কিছু গেমিং অ্যাপ। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হচ্ছে পাবজি, ফ্রি ফায়ার, ক্লাস অব ক্লানের মতো ব্যাটেল গ্রাউন্ড গেমসগুলো। প্রজন্মের একটি অংশ এসব গেমসে এমনভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের পারিপার্শ্বিক অন্য কোনো বিষয়ে খবর থাকে না। তারা পড়ার টেবিল, খেলার মাঠ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

তরুণ প্রজন্ম ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার

দেশ ডিজিটালাইজেশনের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে সেই আধুনিকতার সুষ্ঠু ব্যবহার গ্রামাঞ্চলেও হয় না। এরা প্রযুক্তির কালো দিক বেছে নিয়ে বিভিন্ন নিষিদ্ধ সাইটে প্রবেশ করে বাধাগ্রস্ত করছে দেশের উন্নতি। কারণ দেশের উন্নতি দেশের তরুণ সমাজের ওপর ন্যস্ত থাকে। তাই তাদের জীবনের উন্নতি বাধাগ্রস্ত মানেই দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা। প্রযুক্তির যে শুধু খারাপ দিকই রয়েছে তা কিন্তু নয়। যে প্রযুক্তিতে বুঁদ হয়ে অনেকে নষ্ট করছে তাদের সুন্দর ভবিষ্যত্, আবার সেই প্রযুক্তিই মানুষকে নিয়ে যেতে পারে সফলতার শীর্ষে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ দরিদ্র বা অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে এবং স্বীকৃতি পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে তরুণ প্রজন্ম বিনির্মাণ করবে সোনার বাংলা—এমনটাই প্রত্যাশা সবার। প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়াতে হবে কাজের ক্ষেত্র এবং সেই সঙ্গে পরিবার, রাষ্ট্র তথা নিজেকেও সচেতন রাখতে হবে প্রযুক্তি ব্যবহারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্য প্রুযুক্তি