করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি তো হচ্ছেই না, বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণের হার রেকর্ড ভাঙছে। কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৪ জুলাই বিধিনিষেধের এই মেয়াদ শেষ হবে ১৪ জুলাই।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেছে।আজ চলছে কঠোর বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিন । আগের দিনগুলোর তুলনায় আজ রাস্তায় বেশি মানুষের চলাচল দেখা যাচ্ছে। কঠোর বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিনেও বেশ সক্রিয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
লকডাউনের শুরু থেকেই বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত গ্রেফতার ও জরিমানা করছেন। এ ছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখানো ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তল্লাশির সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে তারা তাদের গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন।
আজও সেনাবাহিনী ও বিজিবি টহল অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর মহাসড়কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট-এর নেতৃত্বে মোবাইল টিম টহল দিচ্ছে।
কঠোর বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিনেও বেশ সক্রিয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোড়ে মোড়ে আছে পুলিশের চেকপোস্ট। বিভিন্ন চেকপোস্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। গত পাঁচ দিনের মতো আজও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের সচেতনতার পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা ও মামলা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তবে বিধিনিষেধ না মানার প্রবণতা দেখা গেছে মানুষের মধ্যে। অনেকেই ঘর থেকে রাস্তায় বের হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে । অনেককে আটক করা হচ্ছে।
মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। বিনা কারণে বাইরে আসলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অনেককে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। প্রকৃত কারণ যাচাই করে অনেককে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
এরই মধ্যে সরকারী বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কারণে-অকারণে, নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন প্রচুর মানুষ। রাজধানীতে বিনা কারণে বের হওয়ায় প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার, জরিমানা ও তাদের গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।
সাতদিনের বিধিনিষেধে আগের চেয়ে রাজধানীর সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পথচারী ও নানা প্রয়োজনে বের হওয়া নগরবাসীর চলাচলও। কোনো কোনো চেকপোস্টে যানবাহনের দীর্ঘ সারিও দেখা গেছে। রাস্তায় যানবাহনের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও বিভিন্ন পয়েন্টে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুরের আদাবরে দায়িত্বরত অবস্থায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: আরিফুল ইসলাম বলেন,যারা বাইরে আসছেন, তারা জরুরি সেবায় নিয়োজিত। তারপরও শুধু জরুরি সেবায় নিয়োজিত লেখা দেখলেই যে ছেড়ে দিচ্ছি তা নয়, আমরা প্রতিটি গাড়ি তল্লাশি করছি ও আরোহীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি।
তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি-পরিবার, সমাজ, দেশকে করোনা থেকে সুরক্ষার দিকটা বিবেচনায় আমরা কঠোরভাবে সরকারী বিধিনিষেধ পরিপালনের চেষ্টা করছি। একান্তই জরুরি ও অত্যাবশ্যক কারণ ছাড়া বা বিধিনিষেধের নির্দেশনার আওতার বাইরে যারা রয়েছেন তারা শুধু বের হতে পারছেন। এর বাইরে আমরা কিন্তু চেকপোস্ট বসিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, যাদের কারণ যথোপযুক্ত মনে হচ্ছে না তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। অনেকে বিনা প্রয়োজনেও ঘুরতে বের হচ্ছেন এজন্য তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা জরিমানার চেয়ে সচেতনতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।
তিনি বলেন, যাদের মাস্ক নেই তাদেরকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে রাজধানীবাসী সচেতন হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা নিয়ম ভঙ্গ করতে অভ্যস্ত। বেশিরভাগ মানুষকেই সচেতন হতে দেখা গেছে। আগের তুলনায় মানুষের মাস্ক পরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন বিশেষ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করছি। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করছি। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অনেকেই সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করছেন না। সচেতনতার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। বিধিনিষেধ ভেঙে বাইরে বের হওয়া ব্যক্তিদের প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা বা কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে।
গত ১ জুলাই সাত দিনব্যাপী কঠোর লকডাউন চলমান থাকা অবস্থায় করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটলে গতকাল সোমবার নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সময়সীমা আরো সাত দিন বাড়িয়েছে সরকার।
সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের নির্দেশনা জারি করে সরকার। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার কথাও বলা হয় নির্দেশনায়। বন্ধ রয়েছে সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস। ১৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে কঠোর লকডাউন।