ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রাকিবুল ইসলাম। নাগরিকত্ব সনদ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯, ৫০, ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানার কাছ থেকে। যে কাজের জন্য সনদ নেন সেখানে গিয়ে জানতে পারেন সংরিক্ষত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেটি দিতে পারেন না। এটি শুধু সাধারণ কাউন্সিলররাই দিতে পারেন। পরে তিনি হয়রানিতে পড়ায় থানায় জিডিও করেন। শুধু রাকিবুল নয়, এই ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দাকে ওয়ারিশ সনদ দেন এই কাউন্সিলর। অথচ মৃত ব্যক্তি আরেকটি বিয়ে করায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ওয়ারিশ সনদে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ নিয়ে তিনি সাধারণ কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগও দেন। পরে তিনি জানতে পারেন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আইন অনুযায়ী সেটি দিতে পারেন না।
উত্তরাধিকার, জাতীয়তা ও চারিত্রিক সনদপত্র নিয়ে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মধ্যে। বিশেষ করে যেখানে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলররা আইন অনুযায়ী এমন সনদ দিতে পারেন না, সেখানে তারা এই সনদপত্র দিয়েই যাচ্ছেন। নাগরিকরা না জেনে নিচ্ছেন সেই সনদপত্র। এ নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। যারা নিচ্ছেন তারাও পড়ছেন ঝামেলায়।
সিটি করপোরেশন বলছে, যারা এসব সনদ দিচ্ছেন তারা নিজ উদ্যোগেই দিচ্ছেন। এটি দেওয়ার তাদের বিধান নেই। স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের এক জন সাধারণ কাউন্সিলর মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার, জাতীয়তা ও চারিত্রিক সনদপত্র দিতে পারেন। কিন্তু সংরক্ষিত কাউন্সিলরের কার্যাবলীতে এমন কোনো কিছু উল্লেখ নেই।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও বলছে, আইন অনুযায়ী তারা সেটি পারেন না। বেআইনিভাবে কেউ দিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-১) নুমেরী জামান বলেন, আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের এসব সনদ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। কেউ যদি এমন তা দিয়ে থাকেন তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ নারী কাউন্সিলর তা মানতে রাজি নন। তাদের দাবি, আইনে তাদের সনদ দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা নেই। আবার দেওয়া যাবে না এমন কথাও বলা নেই ।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২,৩,৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা ইয়াসমিন বিপ্লবী বলেন, ‘কোথাও লেখা নেই, আমরা সনদ দিতে পারব না। তাই আমরা সনদ দিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে সাধারণ কাউন্সিলর না থাকলে আমরা দেই। ওয়ারিশ সনদ দিতে গেলে যে খোঁজখবর নিতে হয়, সেটি কীভাবে করেন, জনবল আছে কি না—এমন এক প্রশ্নের জবাবে, তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট লোকজন আছে।’ দক্ষিণ সিটির আরেক সংরক্ষিত কাউন্সিলর মাকসুদা সমশের বলেন, ‘আমাদের জনবল নেই। তাই আমরা ওয়ারিশ সনদ সাধারণত দেই না। তবে অন্য সনদ দেই। অনেকে অবশ্য সব সনদই দেন।’
অন্যদিকে উত্তর সিটির আরেক সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘কাগজপত্র ঠিক থাকায় আমরা তাদের সনদপত্র দেই। আইনে কোথাও উল্লেখ নেই যে, সংরক্ষিত কাউন্সিলর এই সনদ তাদের দিতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশেনের আইন কর্মকর্তা মো. খায়রুল হাসান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের এ সনদ দেওয়ার কথা উল্লেখ নেই। সবার কার্যবিধিতে আলাদা করে কাজগুলো ভাগ করে দেওয়া আছে। তবে অনেকেই এই সনদ দিচ্ছেন। এটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।আমরা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করে পরবর্তী নির্দেশনা জানিয়ে দেব সবাইকে।’