আবদুল্লাহ আল মামুনপবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারা দেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অজ্ঞান, মলম ও জাল নোট কারবারি চক্র। সারা দেশে পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও দূরপাল্লার যাত্রী, ব্যাংকের গ্রাহক ও পোশাক কারখানার কর্মকর্তাদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছে চক্রের সদস্যরা। তাদের খপ্পরে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এসব চক্রকে প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার রাজধানীর মহাখালী থেকে অজ্ঞান চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জাল নোট চক্রের অর্ধ শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ও পুলিশ।
এদিকে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে জাল নোট শনাক্তের যন্ত্র বসাতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া পশুর হাটে গরু কেনাবেচাসহ ব্যাংকে ও বাইরে বড় লেনদেনে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, সারা বছর ছোট-বড় অপরাধ করলেও মূলত পশুর হাটগুলোকে টার্গেট করে বেশি তৎপর হয়ে ওঠে একাধিক চক্র। বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে মাঠে কাজ করে চক্রের সদস্যরা। অজ্ঞান ও জাল নোট কারবারি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেও কারাভোগের পর বাইরে বেরিয়ে আবারও একই পেশায় ফিরে আসে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঈদ ঘিরে রাজধানীতে সক্রিয় অজ্ঞান পার্টি ও জাল নোট কারবারিদের প্রতিরোধে পুলিশ ও গোয়েন্দারা সক্রিয় রয়েছে। আর্থিক লেনদেনে সতর্কতার পাশাপাশি বড় ধরনের লেনদেনে পুলিশের সহায়তা নিতে আহ্বান জানান তিনি।
মহাখালীতে মলম পার্টির ৫ সদস্য গ্রেফতার : র্যাব-২-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মো. ফজলুল হক বৃহস্পতিবার বলেন, বুধবার রাতে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২। তারা হলো- মোফাজ্জল হোসেন, সাগর সৌরভ, সেলিম, সালমান ও মহসিন। তাদের কাছ থেকে চেতনানাশক ওষুধ, মলম, দৃষ্টিভ্রম করার টাইগার বাম ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পারে, চক্রের সদস্যরা সারা বছর ছোট-বড় অপরাধ করলেও ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে মাঠে নেমেছে। তাদের মূল টার্গেট দূর-দূরান্তের যাত্রী ও পশুর হাটকেন্দ্রিক ক্রেতা-বিক্রেতারা। তারা বাস, রিকশাভ্যান বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের সময় সাধারণ যাত্রীর কাছাকাছি অবস্থান করে সুযোগ বুঝে তরল কেমিক্যাল বা মলম দিয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে সটকে পড়ে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়াসহ অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১২ জুলাই রাজধানীর বাড্ডা নুরেরচালা এলাকা থেকে আব্দুর রহিম শেখ ও ফাতেমা বেগম নামে জাল নোট কারবারে জড়িত এক দম্পতিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাসার ভেতরে জাল নোট তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করে মাসে কোটি টাকা তৈরি করত তারা।
বুধবার রাজশাহী থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার জাল নোটসহ আজিবর আলী নামে এক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৫। ৫ জুলাই পল্লবী থানা এলাকা থেকে জাল নোটসহ দুই কারবারিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ২১ জুন রাতে মেরুল বাড্ডা থেকে সংঘবদ্ধ জাল নোট চক্রের অন্যতম সদস্য নাইমুল হাসান তৌফিক নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে র্যাব। তার কাছ থেকে ৫০ লাখ ২৮ হাজার টাকার জাল নোট ও জাল নোট তৈরির কাজে ব্যবহৃত বিপুল সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। র্যাব জানায়, আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর হাট ও অন্যান্য বাজারে ছড়িয়ে দিতে জাল নোট তৈরি করা হচ্ছিল। ১ লাখ টাকার জাল নোট বাজারে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করত চক্রটি।
এ ছাড়া গত ২৪ জুন মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭০০ টাকার জালনোটসহ এক যুবককে গ্রেফতার করে র্যাব। ১৩ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জাল নোটসহ এক দম্পতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৫ জুন রাজধানীর পল্টন ও বরিশালের মুলাদী থেকে জাল নোট কারবারি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডি। ৪ জুন মিরপুর থেকে জাল টাকা, সরঞ্জামসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।