- জি-বাংলায় প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন
- জিনের সাহায্যে মেলে সমস্যার সমাধান
- অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন প্রতারণার শিকার
মনোয়ার হোসেন ॥ হয়ত আপনি দীর্ঘদিন ধরে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। কর্মদক্ষতা সত্তে¡ও প্রমোশন হচ্ছে না আপনার। হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। হয়ে যাবে সমস্যার সমাধান। জিনের বাদশার সহায়তায় আপনার পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দেবেন বান্দরবানের রুমা বাজারের দেবতা মন্দিরের জীবন্ত কিংবদন্তি সাধু বাবা। শুধু চাকরির প্রমোশন নয় পড়াশোনায় অমনোযোগিতা, ক্রমাগত ফেল করা ছাত্রকেও পাস করিয়ে দিতে পারেন এই সাধু বাবা। এখানেই শেষ নয়। যে কোন সমস্যার গায়েবি সমাধান দিতে পারেন তন্ত্রমন্ত্রের গুণে গুণান্বিত এই সাধু বাবা। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মিল-মহব্বত না থাকলেও সাধু বাবার দেয়া ফর্মুলায় সুখে-শান্তিতে সুখের সংসার গড়তে পারবেন যে কোন অসুখী দম্পতি। এই প্রতারক সাধুর দেয়া রাজমোহিনী রতেœর মাধ্যমে সঠিক পথে ফেরানো যাবে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া স্বামীকে। যতই ঝামেলা থাক ঘুচে যাবে যে কোন ব্যবসার ব্যর্থতা। অবাধ্য যে কাউকে বশ করাও সম্ভব, যে কোন অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করা সম্ভব এই তরিকায়। এমনকি খুন-ডাকাতি-ধর্ষণসহ চরম অপরাধের মামলায়ও পরিত্রাণ মেলে তার দেয়া মহৌষধে। অক্ষম মানুষের যৌন সমস্যার সমাধানেও জুড়ি নেই বাবার দেয়া ব্যবস্থাপত্রে। এর বাইরে যে কোন গোপন রোগে সহজেই মিলবে মুক্তি। ভালবাসায় ব্যর্থ হলেও ক্ষতি নেই। কাক্সিক্ষত প্রেমিক-প্রেমিকা কড়া নাড়বে সাধু বাবার নির্দেশনা গ্রহণকারীর দরজায়। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা পাওনা টাকাও আদায় হয়ে যাবে তার কারিশমায়। ফিরে পাওয়া যাবে হারিয়ে যাওয়া যে কোন বস্তু। সাধুর দেয়া তন্ত্রমন্ত্রময় রতেœর গুণে ভিখারিও হয়ে যেতে পারেন অঢেল ধন-সম্পদের মালিক। নেশায় আসক্ত যে কেউ সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পাবেন আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যাকে হার মানিয়ে তাক লাগানো এই আজগুবি চিকিৎসায়। প্রবাসে পাড়ি জমানো আকাক্সক্ষাটাও অধরা থাকবে না এই সাধুর দেয়া টোটকায়। মিলে যাবে যে কোন দেশের ভিসা থেকে ওয়ার্ক পারমিট। মোট কথা কোন ব্যক্তির যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সাধু বাবার ভোজবাজিতে। এজন্য কাউকে খুব বেশি দৌড়ঝাঁপও করতে হবে না। শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনে দেয়া বহু মুঠোফোন নম্বরের একটিতে সংযোগ স্থাপন হলেই হাতের নাগালে চলে আসবে সমস্যার সমাধান। সরাসরি কথা হলে অনেক সময় জিনের বাদশাকে হাজির করে সাধু বাবা দিয়ে থাকেন তাৎক্ষণিক সমাধান। আর তা না হলে পার্সেলযোগে জিনের মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশনা বা সাধুর দেয়া টোটকা পৌঁছে যাবে সমস্যাজর্জরিত মানুষটির দুয়ারে।
উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে তথ্য সম্প্রচার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভাবেই প্রচারিত হয় প্রতারণামূলক টিভি বিজ্ঞাপন। এদেশের দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ভারতীয় টিভি চ্যানেল জি বাংলায় প্রতিদিন নিয়ম করে দেখানো হয় এই বিজ্ঞাপন। অশ্লীল এই বিজ্ঞাপন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখা প্রায় অসম্ভব।
প্রতারণার ফাঁদ পাতা এই বিজ্ঞাপনের টার্গেট অডিয়েন্স থাকে বাংলাদেশের দর্শক। ভারতীয় বা অন্য কোন দেশের দর্শকদের দেখতে হয় না সম্প্রচার আইনকে লঙ্ঘন করা এই বিজ্ঞাপন। অন্যদিকে এমন আইন লঙ্ঘনের সুযোগে চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন অসংখ্য অসচেতন মানুষ। অথচ অবলীলায় এমন আইন ভঙ্গকারী এই প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের প্রচার বন্ধ করার যেন কেউ নেই। সর্বোপরি দেশের সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশী কোন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো আইনীভাবে অবৈধ হলেও প্রতিদিন প্রচারিত হয় এই বিজ্ঞাপন। তারপরও নীরবতা বিরাজ করছে প্রচারণার মাধ্যমে প্রতারণা করা এই বিজ্ঞাপনের প্রচার বন্ধে। শুধু জি-বাংলা নয় সনি আটসহ বেশ কিছু চ্যানেলেই প্রচারিত বিজ্ঞাপনে সম্প্রচার নীতিমালার লঙ্ঘন ঘটছে। জি বাংলার মতোই সনি আটের একটি বিজ্ঞাপনে গানের সুরে সুরে আল্লাহ বরকত লকেট নামের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধানের বার্তা দেয়া হয় দর্শকদের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সংস্কৃতিজনরা।
পরিচয় গোপন করে জনকণ্ঠের এই প্রতিবেদক ফোনে সংযোগ স্থাপন করেন বিজ্ঞাপনে প্রচারিত একটি নম্বরে (০১৭৮৩৪৯১৬৯৭)। ফোনটি রিসিভ করেন রাসেল নামের সাধু বাবার এক খেদমতগার। দীর্ঘদিন চাকরি করেও কাক্সিক্ষত প্রমোশন হচ্ছে না-এই বিষয়ে সমাধান চাওয়া হয় তার কাছে। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, আপনি কি একই প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি চান নাকি পদোন্নতির মাধ্যমে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চান? গুরুজী চাইলে সব কিছুই সম্ভব। আলাপচারিতার একপর্যাপয়ে তিনি একটি বিকাশ নম্বরে ৩২০ টাকা পাঠানোর মাধ্যমে হাজিরা দেয়ার কথা বলেন। হাজিরা নিশ্চিত হলে সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলা যাবে সাধু বাবার সঙ্গে। সাধু বাবা কি ওষুধের মাধ্যমে নাকি অন্য উপায়ে সমস্যার সমাধান করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে রাসেল বলেন, সেটা গুরুজী বুঝবেন। সাধারণত তিনি জিনকে হাজির করে বা জিন হাজিরার মাধ্যমে সমাধান দিয়ে থাকেন সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে। এছাড়া অন্য তরিকাতেও সমাধান দেয়া হয়। এমন বাস্তবতায় ১৫ জুলাই রাসেলের দেয়া একটি বিকাশ নম্বরে ৩২০ টাকা পাঠিয়ে সাধু বাবার কাছে হাজিরা নিশ্চিত করেন এই প্রতিবেদক। হাজিরা নিশ্চিতের ১৫ মিনিটের মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সাধু বাবার সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া হয়। সেসময় খেদমতগারেরর পক্ষ থেকে বলা হয়, গুরুজীকে আদাব বা নমস্কার দিয়ে কথা বলবেন।
মুঠোফোনের অপরপ্রান্তে হাজির হন সাধু বাবা নামের গুরুজী। অতঃপর সমস্যার কথা শুনে গুরুজী বলেন, ‘এ জন্য তোকে একটা কাজ করতে হবে, সেটা তুই পারবি? বিকাশ নম্বরে ৪ হাজার ১২০ টাকা পাঠালে তোর জন্য একটি রাজমোহিনী রত্ন পাঠাব। হাতে পেলে বুঝবি সেটা কি জিনিস! নিজেকে পবিত্র রেখে ওই রত্ন তোর হাত এবং চুলের স্পর্শ লাগলে তিনটি মনঃকামনা পূর্ণ হবে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো যে উদ্দেশ্যে তুই বাবার শরণাপন্ন হয়েছিস তা পূরণ হবে। দ্বিতীয়ত, তুই যে আয়-রোজগার করিস তার বরকত বাড়বে এবং শকুনের কুনজর যেন ওই টাকার ওপর না পড়ে তা থেকে ওই টাকা রক্ষা পাবে। তৃতীয়ত, তোর বা তোর পরিবারের ওপর কোন জাদু-টোনার বাণ থাকলে সেটা থেকেও রক্ষা পাবি। এগুলো তো থাকছেই। এর বাইরে রাজমোহিনী রত্মে হাতের স্পর্শ লাগার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টার মধ্যে তুই যে কোম্পানিতে চাকরি করিস সেখানে পদোন্নতি হয়ে যাবে। অটোমেটিকভাবে তুই উপরের চেয়ারে উঠে যাবি। হয়ে যাবে পদোন্নতি। এক থেকে তিন দিনের মধ্যে এই রতœ তোর কাছে পৌঁছে যাবে। পাক-পবিত্র হয়ে আমার লোকের মাধ্যমে সেটা গ্রহণ করবি এবং আমার ১১ জন জিনের নজরানা হিসেবে ৪ হাজার ১২০ টাকা দিয়ে দিবি তার হাতে।
এমন পর্যায়ে প্রবঞ্চক গুরুজীর কাছে জানতে চাই-এ ধরনের রত্ন বা ওষুধ দেয়ার জন্য তার কোন সরকারী অনুমোদন আছে কিনা? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, অনুমোদন না থাকলে এত বড় ভিআইপি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করে এই বান্দরবানে রাজত্ব করতে পারতাম? প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০জন হাজিরার মাধ্যমে আমার পরামর্শ নিতো না। এছাড়া এখানে যারা সরাসরি আসে তাদের কথা তো বললামই না। শিক্ষিত মানুষ হয়েও তুই কেন এসব বুঝিস না? কোন্ মন্ত্রণালয়, সংস্থা বা দফতরের মাধ্যমে অনুমোদন পেয়েছেন-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমার ছেলেদের জিজ্ঞাসা কর। তারা বলে দেবে। রাজমোহিনী রত্ন কোথায় থেকে সংগ্রহ করেন-সেই প্রশ্নের জবাবে তথাকথিত এই সাধু বলেন, ওটা জিনদের চরণ থেকে সংগ্রহ করি। এই কথোপকথন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে অসাধু সাধুর নিয়োজিত রাসেল নামের সেই খেদমতগার এই প্রতিবেদককে অকথ্য ভাষায় অনবরত গালিগালাজ শুরু করে। কয়েক দফা ফোন দিয়ে সেই অশ্লীল গালি দেয়ার পাশাপাশি দেখে নেয়ার হুমকি দিতে থাকে।
সাধু বাবার দেয়া তথ্যমতে ৩২০ টাকা হাজিরার মাধ্যমে প্রতিদিন ৩৫০ জন সমস্যাপীড়িত মানুষকে সমাধান বাতলে দিলে নিত্যদিনের রোজগার হয় ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতিমাসে শুধু হাজিরার মাধ্যমে আয় ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এক বছরে টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ৪ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার। জিনের চরণ থেকে প্রাপ্ত রাজমোহিনী রতœ বিক্রির বড় অঙ্কের টাকার হিসাবটি জানা নেই এই প্রতিবেদকের।
তথ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত ২০১৪ সালের সম্প্রচার নীতিমালার পটভূমিতে বলা হয়েছে, সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপনসমূহ শ্রোতা ও দর্শকদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এজন্য সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। সেই সুবাদে সম্প্রচার মাধ্যমসমূহের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। সম্প্রচার নীতিমালার চতুর্থ অধ্যায়ে বিজ্ঞাপন সম্প্রচারসংক্রান্ত নীতিমালার ৪.২.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপনে এমন কোন বর্ণনা বা দাবি প্রচার করা যাবে না যাতে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতারিত হতে পারে। ৫.১.১০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দুর্নীতিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহ প্রদান করে এমন বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। অথচ এই দুই আইনকে লঙ্ঘন করে করে জিনের সাহায্যে সকল সমস্যা সমাধানের নামে প্রতারণার বিস্তৃত জাল বিছিয়ে রেখেছেন সাধু বাবা। ওই নীতিমালার ৪.৩.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সংস্কৃতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে এমন বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। অথচ গায়েবিভাবে সকল সমস্যার সমাধান করা সাধু বাবার প্রচারিত বিজ্ঞাপনটি কোনভাবেই দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ৪.৪.৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সামাজিক ও আইনগতভাবে স্বীকৃত নয় এমন ক্লাব-সমিতির বিজ্ঞাপন প্রচারযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে সামাজিকভাবে স্বীকৃত না হলেও দেবতা, মন্দিরের নামে সুকৌশলে চলছে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা এই বিজ্ঞাপন। এভাবেই সম্প্রচার নীতিমালার অনেক ধারাকে পাশ কাটিয়ে দিনের পর দিন প্রচারিত হচ্ছে এই বিজ্ঞাপনচিত্র।
জি-বাংলার বাংলাদেশের পরিবেশক মিডিয়া কেয়ার লিমিটেড। প্রতারণার ফাঁদ পাতা চাতুর্যপূর্ণ এই বিজ্ঞাপন প্রচার প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক রুবায়েত খালিদ আল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফোন রিসিভ করার পর এই প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকার অজুহাতে এক ঘণ্টা পর ফোন দিতে বলেন। এরপর অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি। পরবর্তীতে এসএমসের মাধ্যমে বান্দরবানের সাধু বাবার প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে তথ্য সম্প্রচার আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়। পরিবেশক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়ভার গ্রহণের বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি এসএমএসের জবাব দেননি।
প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনটির বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বিদেশ থাকায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও সম্প্রচার শাখার অতিরিক্ত সচিব মোঃ মিজান উল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। প্রতারণার ফাঁদ পাতা এই অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তব বিজ্ঞাপনটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। সে কারণে আমার শাখার উপসচিব ও সহকারী সচিবকে বিজ্ঞাপনটি সংগ্রহ করে উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর বিজ্ঞাপনটি দেখে পুরো বিষয়টি যাচাই করে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে বর্তমানে শত শত চ্যানেল চলছে। তাই অনেক সময় চাইলেও সব চ্যানেল মনিটর করা সম্ভব হয় না। এছাড়া সম্প্রচার নীতিমালা আইন অনুযায়ী দেশে পরিবেশিত কোন বিদেশী চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ নেই। এটা নিয়েও মন্ত্রণালয় থেকে অনেক কাজকর্ম করে যাচ্ছে। অনেক মিটিং হয়েছে। সবকিছু গুছিয়ে ক্লিন ফিট করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, প্রতারণাপূর্ণ এমন অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতাই দৃশ্যমান হয়। তাদের উচিত ছিল এটা মনিটর করে ভারতের হাইকমিশনে অভিযোগ দিয়ে বিজ্ঞাপনটি বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া। এ ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের মানুষ প্রতারিত হচ্ছে অন্যদিকে ভারতে টাকা পাচার হচ্ছে। জি বাংলা তো এই বিজ্ঞাপন বিনা পয়সায় প্রচার করছে না। এজন্য জি-বাংলার বাংলাদেশী পরিবেশক মিডিয়া কেয়ার লিমিটেডের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা হওয়া উচিত। আমি মনে করি, এই বিজ্ঞাপনটি প্রচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, জি বাংলার মতো একটি প্রতিষ্ঠিত টিভি চ্যানেলে কি করে এ ধরনের প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন করা সম্ভব। এটা তো চরম জালিয়াতিপূর্ণ একটি বিজ্ঞাপন। এছাড়া বিদেশী কোন চ্যানেলে দেশের বিজ্ঞাপন প্রচার হলে সম্প্রচার নীতিমালা মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে এমন কোন বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়া উচিত না যেটা কাল্পনিক, অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তব এবং দর্শককে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এছাড়া সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনটি প্রচার হতে পারে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত তথ্য মন্ত্রণালয়ের।