বরিশাল ব্যুরো
‘কলকারখানা খোলা রেখে লকডাউনের দরকার নাই। আমাদের সাথে রঙ-তামাশা শুরু হয়েছে। গরিব কীভাবে যাতায়াত করবে, সে সম্পর্কে সরকারের মোটেও মাথাব্যথা নাই।’ ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাওয়ার জন্য বরিশালে আসা যাত্রী মেহেদী হাসান এভাবেই বলছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘করোনা দিয়া কী করব? ঘরে চাল নাই। কারখানায় না গেলে চাকরি থাকবে না। আমরা কি না খেয়ে মরুম?’
পথযাত্রী পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার বাসিন্দা সুজন বলেন, ‘গরিবের করোনা হয় না। যদি হইত, তাহলে আমাগো যাওয়ার জন্য অন্তত একটা ব্যবস্থা করে দিত। গাড়ি বন্ধ করে কারখানা খোলার কোনো মানে হয়?’
আজ শনিবার দুপুরে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকাগামী এই দুই যাত্রী। মূলত লকডাউনের মধ্যেই উৎপাদন কারখানা চালু করার ঘোষণায় তারা চাকরি বাঁচাতেই ঢাকা পৌঁছানোর জন্য এত কষ্ট করছেন পথে পথে।
সরেজমিনে নগরীর রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ দুই বাসটার্মিনাল এলাকায় লোকারণ্য দেখা গেছে।
প্রতি ১০ মিনিটের ব্যবধানে এক একটি ট্রাক গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে মাওয়া ও আরিচা ফেরিঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া স্বল্পতম দূরত্বে রিকশা, ভ্যান ও থ্রি-হুইলারে করে মানুষ গন্তব্যে যেতে যাত্রা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বাস শ্রমিক জহিরুল বলেন, ‘সকালে কয়েকটি ট্রাক নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে।’
তবে নথুল্লাবাদে ট্রাফিক পুলিশ সেই ট্রাক আটকে দিলে যাত্রীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। এর আধা ঘণ্টা পরে সড়কে আর কোনো পুলিশ দেখছি না। ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যানে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে।
অনেকে রূপাতলী থেকে কোনো পরিবহন না পেয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন ঢাকায়। কথা হয় তেমনই একজন টেক্সটাইল শ্রমিক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঝালকাঠির আমুয়া থেকে বরিশাল আসতে ৮শ’ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পকেটে আরও এক হাজার টাকার মতো আছে। ট্রাকে মাওয়া পর্যন্ত জনপ্রতি ৭শ’ টাকা করে চাইছে। ট্রাকে গেলে মাওয়ার ওপারে উঠব কেমনে? আর রোববার কারখানায় যোগ দেব কেমনে বুঝতে পারছি না। কারখানায় না গেলে চাকরি থাকবে না।’
নথুল্লাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাওয়া পর্যন্ত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বা পিকআপে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা ভাড়া আদায় করছে। মোটরসাইকেলে জনপ্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
রাজাপুরের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ‘কাল যদি কারখানায় কাজে যোগ না দিই, তাহলে আমার চাকরি থাকবে না। গতকাল শুক্রবার কারখানা থেকে মোবাইলে জানিয়েছে, রোববার কাজে যোগ না করলে; চাকরি বাতিল। অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে রওয়ানা দিয়েছি।’
আরিফুর রহমান নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘ছুটিতে আমরা এসেছি। কিন্তু যাওয়ার সময়ে কোনো গাড়ি নাই। শ্রমিকদের কারখানা খুলে দেবেন আর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন না, তাহলে কেমনে হয়। এভাবে গাড়ি বন্ধ রেখে কারখানা খুলে লকডাউন কার্যকর করার কোনো মানে নেই। এটা আরও বিপজ্জনক।’
ভান্ডারিয়া থেকে হেঁটে আসা যাত্রী নাসির গাজী বলেন, ‘লকডাউন না তুলে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত মোটেই যৌক্তিক না। শ্রমিকদের অর্থকষ্ট দুটোই গেছে। করোনার ভয়ও বাড়ছে।’
বরিশাল মহানগরীর এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপ্লব বড়ুয়া জানান, সকাল থেকে পায়ে হেঁটে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নারী-পুরুষ পোষাক শ্রমিকরা নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে জড়ো হন। এসময় সেখানে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। পরে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।