নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ-আমানতে সুদ হারে নীতিমালা নেই উচ্চসুদের প্রলোভন দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ প্রতিষ্ঠানগুলোর * ব্যাংকের মতো নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও সুদ হার বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ-আমানতে সুদ হারে নীতিমালা নেই উচ্চসুদের প্রলোভন দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ প্রতিষ্ঠানগুলোর * ব্যাংকের মতো নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও সুদ হার বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

হামিদ বিশ্বাস

সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আমানতে ৬ এবং ঋণে ৯ শতাংশ সুদ নিতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সে আলোকে গত বছর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। একই বছরের এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলো তা কার্যকর করেছে। কিন্তু সে প্রজ্ঞাপনের আওতায় নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে রাখা হয়নি। ফলে সুদ হার ইচ্ছেমতো আরোপ করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

উচ্চসুদের প্রলোভন দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষকে মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে এসব প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আমানতের ক্ষেত্রে দুই বছরে মূল অর্থের দ্বিগুণ, তিন বছরে তিনগুণ এবং চার বছরে চারগুণ সুদের প্রস্তাব দিচ্ছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, কাউকে বেঁধে দেওয়া আর কাউকে লাগাম ছাড়া রাখা ঠিক নয়। কারণ একই বাজারে দুই নীতি চলতে পারে না। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একটি যৌক্তিক সুদ হার থাকা উচিত।

এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ঋণের উচ্চসুদ নিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্দেশনায় তা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেহেতু ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে একই ধরনের বা যৌক্তিক পর্যায়ের কোনো সুদ হার নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। কারণ একই মার্কেটে দ্বিমুখী নীতি হওয়া উচিত নয়।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কস্ট অব ফান্ড বেশি। তবুও যৌক্তিক সুদ হার থাকা উচিত। কিছুটা চাপে না থাকলে আবার বিপজ্জনক পথে চলে যেতে পারে। তাই অর্থনৈতিক নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে যতটা সম্ভব নৈতিক চাপ বা একটা সীমায় রাখা দরকার।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ফেসবুক পেজে একটা বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এতে আমানতে দুই বছরে দ্বিগুণ, তিন বছরে তিনগুণ এবং চার বছরে চারগুণ সুদ অফার করা হয়েছে।

এদিকে ফিক্সড ডিপোজিটে সাড়ে নয় শতাংশের লোভনীয় অফার দিয়ে খুদে বার্তা দিচ্ছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স। এ বিষয়ে জানতে খুদে বার্তায় দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) গোলাম মহিউদ্দিন জানান, তিন প্রক্রিয়ায় ইন্টারেস্ট নেওয়া যাবে। প্রতি মাসে, তিন মাস অন্তর এবং এক বছর পর লাভ ও আসল একসঙ্গে উত্তোলন করা যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিট বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। তাহলে আপনারা কীভাবে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদ দেবেন? জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, এটি ব্যাংকের জন্য নির্দেশনা আমরা আরও ৬ শতাংশ বেশি সুদে ঋণ দিতে পারি। তাই এ অফার দেওয়া হয়েছে। আমরা ২৮ বছর সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছি। আমাদের কোনো অনিয়ম নেই।

মাসিক আয় স্কিমের নামের অফারে এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে ১ হাজার ২২ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে পাঠানো খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র রিলেশনশিপ অফিসার মাঈনুল হাসান বলেন, অফারটি কিছুদিন কার্যকর ছিল। ১ আগস্ট শেষ হয়েছে। তবে বেশ কিছু নতুন অফার এসেছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো দেওয়া হবে। আরেক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফাইন্যান্স কুইক সঞ্চয় নামের ডিপেজিট স্কিম চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে বলেছে, মাত্র ৫৪ মাসে জমাকৃত অর্থ তিনগুণ করার সুবিধা ‘কুইক সঞ্চয়’।

অর্থ বাণিজ্য