সব জেলা কমিটিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনছে বিএনপি। এর মধ্যে নিষ্ক্রিয়দের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে দলটি। কমিটি গঠনের পর থেকে জেলা নেতাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ইতোমধ্যে জানতে চেয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। প্রতিটি জেলাকে পৃথকভাবে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দিতে বলা হয়েছে। সাংগঠনিক প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব দেওয়া হবে। সাংগঠনিক অবস্থা জানতে দলের ৭৮ সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে ধারাবাহিক ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে এ বৈঠক শুরু হবে। প্রথম দিন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সঙ্গে বৈঠক রয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে আশা এবং লক্ষ্য নিয়ে জেলা কমিটি পুনর্গঠনে হাত দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে জেলার আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়ে দলটি। কারণ জেলার শীর্ষ নেতারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক কাজ শেষ করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে করোনাসহ নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে, যা কাক্সিক্ষত নয়। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আহ্বায়ক কমিটি গঠনের তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে থাকা থানা-উপজেলা-ইউনিয়নসহ সব পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা কমিটি হবে। কিন্তু তিন মাস মেয়াদের কমিটি এক বছর, আবার কোনোটির দুই বছর পার হলেও তৃণমূলের সব পর্যায়ের কমিটি দিতে পারেনি। বেশ কয়েকটি জেলার শীর্ষ নেতারা পদ নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করেন, এলাকায় যান না। তারা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না মেনে তাদের ইচ্ছেমতো চলছেন। তাই জেলার প্রকৃত সাংগঠনিক অবস্থা জানতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বৈঠক করবেন। এতে করে জেলার নেতাদের একটা জবাবদিহি থাকবে। তারা জানান, এসব বৈঠকে জেলার নেতারা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা থাকবেন। আর স্কাইপে লন্ডন থেকে যোগ দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বৈঠকে জেলার নেতারা সাংগঠনিক প্রতিবেদন দেবেন। মোট ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৭৮টির সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। লক্ষ্মীপুর ও ফরিদপুরে কমিটি নেই। আর মাদারীপুরের কমিটি স্থগিত রয়েছে।
নেতারা আরও জানান, কাজ না করেও কিছু জেলার নেতারা প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারেন। সেজন্য নির্দেশনা রয়েছে ভুল তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার বিকালে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও পরে ঢাকা জেলার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যসব জেলার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকে স্কাইপের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থাকবেন। মূলত জেলার সাংগঠনিক অবস্থা কী তার একটি প্রতিবেদন নেওয়া হবে। এ প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে। আগেই এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে জেলা কমিটিকে বলা হয়েছিল।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভার্চুয়াল বৈঠকে জেলার নেতাদের কাছ থেকে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ নিয়ে আরও পর্যালোচনা করা হবে। যেসব জেলা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, থানা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন করে কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে তার একটা তালিকা করবে। পরে সে অনুযায়ী জেলার নেতাদের কাছে ব্যর্থতার কারণ জানতে চাইবেন হাইকমান্ড। সন্তোষজনক উত্তর না পেলে কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি দেওয়া হবে।
বিএনপির দুজন ভাইস চেয়ারম্যান জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নতুন এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে সারা দেশের দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা যাবে। একই সঙ্গে জেলার কোন কোন নেতা দলের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেন, আবার কারা করেন না তাও জানা যাবে। তারা আরও বলেন, একটি জেলা কমিটির শীর্ষ পদে অনেক যাচাই-বাছাই করে নেতা নির্বাচন করা হয়। এটা ঠিক। কিন্তু কেন্দ্রে পদ থাকা সত্ত্বেও আবার অনেক নেতাকে জেলায়ও পদ দেওয়া হয়। দেখা গেছে, এসব নেতার জেলাগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। একজনকে দুটি পদ দিলে তারা অন্যকে মানতে চান না। তখন স্থানীয় নেতাদেরও কিছু করার থাকে না। দুটি পদ নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তারা ঢাকায় থাকেন এবং ঢাকায় বসেই তৃণমূলের কমিটি দেন। এ কারণে এক পক্ষ কমিটি গ্রহণ করলেও আরেক পক্ষের তা প্রত্যাখ্যান করার মতো ঘটনা ঘটছে। এজন্য স্থানীয় নেতাদের হাতেই জেলা কমিটি ছেড়ে দেওয়া উচিত। এতে করে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, আড়াই বছরে ৩৭টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৩৩ জেলা কমিটি নির্ধারিত মেয়াদ পার হলেও এখন পর্যন্ত সব পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। এ ছাড়া এ সময়ে বেশ কয়েকটি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ময়মনসিংহ মহানগর, ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, নেত্রকোনা, গাজীপুর জেলা, নারায়ণগঞ্জ জেলা, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, সিলেট জেলা, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর সাংগঠনিক জেলার শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এদের তিন মাসের মেয়াদ দিলেও তা বহু আগেই শেষ হয়েছে। শুধু নীলফামারী ও মানিকগঞ্জে আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রের নির্দেশ মতো কাজ শেষ করেছে। তারা তৃণমূলের কমিটি দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলার নেতৃত্ব দিতে পেরেছে।