ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির

ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ভোজ্য তেলের দাম। সয়াবিনের দাম বৃদ্ধির পর পিছু ছুটছে অন্যান্য তেলের দামও। বাজারে সয়াবিনের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত সূর্যমুখী ও রাইস ব্র্যান্ডসহ প্রায় সব ধরনের তেলের দাম লিটারপ্রতি বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়তে পারে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। মূলত করোনা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকেই অন্যান্য এসব তেলের দাম বাড়তে থাকে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিপূরক এসব তেলের দাম বৃদ্ধির কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো করোনার কারণে রপ্তানিকারক দেশগুলোতে দাম বৃদ্ধি ও আমদানি খরচ বৃদ্ধি। এ ছাড়া গুণগত মান ধরে রেখে আভিজাত্য বজায় রাখতেও কিছুটা বেড়েছে।

জানা যায়, এক দশক আগেও সূর্যমুখী তেলের বোতল দেখা যেত সুপারশপ আর অভিজাত দোকানের তাকে। শহরের অভিজাত শ্রেণি ছিল এই তেলের মূল গ্রাহক। এখন পাড়া-মহল্লার দোকানে ঠাঁই পাচ্ছে এই তেল।  স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে অভিজাত শ্রেণির পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে রান্নার তালিকায় রাখছে এই তেল। প্রচলিত তেলের চেয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়—পুষ্টিবিদদের এমন পরামর্শেও রান্নার তেল হিসেবে তা জায়গা করে নিচ্ছে। নতুন নতুন গ্রাহক যুক্ত হওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে এই তেলের চাহিদা। একইভাবে রাইস ব্র্যান্ডের তেলের বাজারও তৈরি হয়েছে অনেকটা।

ভোজ্য তেলের বাজারে সূর্যমুখী তেলের অংশীদারি খুবই সামান্য। সয়াবিনের চেয়ে দাম দ্বিগুণ হলেও এই তেলের চাহিদা বাড়ছে সবচেয়ে বেশি হারে। গত পাঁচ বছরের আমদানির তথ্য অনুযায়ী, বছরে গড়ে ৩৭ শতাংশ হারে বাড়ছে সূর্যমুখী তেলের আমদানি। যেখানে একই সময়ে সয়াবিন ও পাম তেলের চাহিদা বাড়ার হার সাড়ে ৭ শতাংশের মতো। সুস্থ থাকার জন্য মানুষের খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন ঘটছে, তারই প্রভাব পড়েছে ভোজ্য তেলের বাজারেও।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাস ছয়েক আগেও সূর্যমুখী তেলের পাঁচ লিটারের জার কেনা যেত এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকায়। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশি ও আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেলের পাঁচ লিটারের জার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৭৫ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। সূর্যমুখী তেলের দুই লিটারের জারের দাম ৫২০ থেকে ৫৪০ টাকা।

রাইস ব্র্যান্ডের (তুষ থেকে তৈরি) ভোজ্য তেলের দাম খুব বেশি না বাড়লেও তা সাধারণ ভোক্তার নাগালের মধ্যে নেই। এসব তেলের পাঁচ লিটারের জার বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯৭৫ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এসব তেলের দাম মাস ছয়েক আগে জারপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা কম ছিল। এই দাম সপ্তাহখানেকের মধ্যে আরো বাড়তে পারে বলে কম্পানি প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব তেলের বিক্রিও বাড়ছে। আগে অর্ডারের ভিত্তিতে রাখলেও এখন নিয়মিতই দোকানে রাখেন তাঁরা।

সূর্যমুখী তেল সরাসরি শোধিত আকারে ও বোতলজাত করে আমদানি করা হয়। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে বোতলজাত সূর্যমুখী তেল আসছে আটটি দেশ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে ইতালি, মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক, স্পেন, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকে।

কিংস তেল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের হেড অব ফিন্যান্স মো. দবিরুল ইসলাম দিদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাসহ যেসব কারণে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে, সেসব কারণে সূর্যমুখী তেলের দামও বাড়ছে। তবে এখনো এসব তেল যে শ্রেণির মানুষ খায়, তাদের কাছে দামের চেয়ে তেলের গুণগত মানের প্রশ্নটাই বেশি থাকে। উচ্চবিত্ত, স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ ও হৃদরোগী—এই তিন শ্রেণির মানুষ মূলত সূর্যমুখী তেলের বড় গ্রাহক।

অর্থ বাণিজ্য