শরীফ শাওন: ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’এর আওতায় ট্যাব ক্রয়ের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে টেন্ডার পেতে বিভিন্ন জালিয়াতির আশ্রয় নেয় ওয়াল্টন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দরপত্র মূল্যায়নে নানা অসামঞ্জস্য দেখে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এটিকে ‘প্রতারণা ও জবরদস্তিমূলক কার্যক্রম’ হিসেবে আখ্যা দেয়। একই সঙ্গে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এসএম মঞ্জুরুল আলম অভিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতাধীন পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাস্তাবায়নাধীন প্রকল্প।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এসএম মঞ্জুরুল আলমের দাখিলকৃত দরপত্রে দলিলাদি ও নমুনা ট্যাবলেটে অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে। সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, চুক্তিনামা স্বাক্ষর হয় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি মাসে। কিন্তু মাসের ৩ তারিখেই কিছু কার্যাদেশ পায় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও যে স্ট্যাম্পে চুক্তি করা হয়েছে, তা ক্রয় করা হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ জুন। অর্থাৎ স্ট্যাম্প কেনার প্রায় দেড় বছর আগেই সেই স্ট্যাম্পেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। টেন্ডারের দলিলপত্রে ‘ওয়াল্টন’ ব্র্যান্ডের ‘ওয়ালপেড ৮জি’ সরবরাহের চুক্তি করা হলেও নমুনা ট্যাবলেটের পিছনে ‘ওয়াল্টন’ লেখা। আর ট্যাব সিস্টেমে গিয়ে দেখা যায় ব্র্যান্ডের নাম ‘এএলপিএস ওয়ালপেড ৮জি’। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি অন্য কারো ট্যাব এনে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের মনোনীত প্রতিনিধি মো. লিয়াকত আলী (ডিএমডি) ক্রয় প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য ও অপবাদমূলক তথ্য সম্বলিত পত্রাদি দাখিল করেছেন যা সরকারি কার্যক্রমমে প্রভাবিত করার শামিল।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে জাল ডকুমেন্ট ও নমুনা ট্যাবকলেট দাখিল পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ১২৭ (২) (খ) ও ১২৭ (২) (ঘ) মতে প্রতারণা ও কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার সামিল। প্রতারণা ও জবরদস্তিমূলক কার্য হিসেবে সেই বিধিমালার ১২৭ (৪) বিধিমতে কেন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এ বিষয়ে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি থেকে।
বুধবার এ বিষয়ে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওয়াল্টন থেকে লিখিত জবাব চেয়েছি। তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, শিগগিরই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চিঠির জবাবে ওয়াল্টন ডিএমডি লিয়াকত আলী জানান, তারা আইন-কানুন মেনেই আবেদন করেছেন। চুক্তির আড়াই বছর পর স্ট্যাম্প কেনার ব্যাখ্যায় বলা হয়, ওয়ালটন প্লাজার কাছে চুক্তির মূল কপি ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল এ প্রতিষ্ঠান। ফলে আরেকটি স্ট্যাপে ওই চুক্তির হুবহু নকল দাখিল করা হয়। এছাড়া ট্যাব ওপেন করলে যে বিদেশি কোম্পানির নাম আসার বিষয়ে বলা হয়, এটা সফটওয়্যারের বিষয়। অপরদিকে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে চিঠিতে দাবি করা হয়।