প্যান্ডোরা পেপারসে শচীন-গার্দিওলার নাম

প্যান্ডোরা পেপারসে শচীন-গার্দিওলার নাম

‘পানামা পেপারস’ ওলট-পালট করে দিয়েছিল অনেক কিছুই। ফাঁস করে দিয়েছিল বিশ্বের নামী ব্যক্তিদের আর্থিক কেলেঙ্কারি। সেরকমই আরেকটি পানামা পেপারস হয়ে হাজির ‘প্যান্ডোরা পেপারস’। যারা সারা বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ফাঁস করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। সেখানে নাম এসেছে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদেরও। ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ও ক্লাব ফুটবলের সফল কোচদের একজন পেপ গার্দিওলার নাম প্রকাশ করেছে প্যান্ডোরা পেপারস।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিআইজে প্যান্ডোরা পেপারস নামের এই গোপন নথি প্রকাশ করেছে। তাদের তদন্তে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিদেশি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, ছদ্মবেশী ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন গোপন আর্থিক লেনদেনের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্বনেতা ও তারকাদের কে কে বিদেশে নিজেদের নাম-পরিচয় গোপন করে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ, বাড়ি ইত্যাদি কিনেছেন, তারও তথ্য আছে।

২০১৩ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান শচীন।

এরপর ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন তিনি। প্যান্ডোরা পেপারসে বলা হয়েছে, সেসময় টেন্ডুলকারের পরিবার বৃটিশ আইল্যান্ডে একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন। বিনিয়োগের সেই অর্থ অবশ্য ২০১৬ সালে তুলে নেয়া হয়েছে। শচীনের স্ত্রী অঞ্জলি ও শ্বশুর আনন্দ মেহতার নামও এসেছে। প্যান্ডোরা পেপারসের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে সেই প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নগদীকরণের সময় শচীন টেন্ডুলকারের শেয়ার ছিল ৯, অঞ্জলির ১৪ ও আনন্দ মেহতার ৫টি। শচীনের শেয়ারের মূল্য ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭০২, অঞ্জলির ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৪ ও শ্বশুরের শেয়ারের মূল্য ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮২ মার্কিন ডলার।

খেলোয়াড়ি জীবনে বিতর্কের উর্ধ্বে ছিলেন শচীন। ঝলমলে ক্যারিয়ারে কখনই ঝামেলায় জড়াননি টেস্ট এবং ওয়ানডের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। প্যান্ডোরা পেপারসে শচীনের নাম আসায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, ‘টেন্ডুলকারের বিদেশে বিনিয়োগ আছে। তবে সব বিনিয়োগই বৈধ ও আইনসিদ্ধ। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই সেই বিনিয়োগ করা হয়েছে।’

ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার নামও এসেছে আলোচিত প্যান্ডোরা পেপারসে। বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক এই কোচের বিষয়ে অনুসন্ধানের তথ্যগুলো অবশ্য বেশ পুরনো। গার্দিওলা যখন খেলোয়াড় ছিলেন সেই সময়কার। গার্দিওলা ১১ বছর বার্সেলোনায় খেলার পর ইতালিয়ান ক্লাব ব্রেসিয়ায় নাম লেখান। সেখান থেকে পরে খেলেছেন এএস রোমা, কাতারি ক্লাব আল আহলি ও মেক্সিকান ক্লাব দোরাদোস দে সিনেলোয়ার হয়ে। প্যান্ডোরা পেপারসে উল্লেখিত ঘটনায় বলা হয়েছে, দুই বছর কাতারের আল আহলিতে থাকার সময় যা আয় করেছিলেন, সেটি জানাননি স্পেনের কর কর্তৃপক্ষকে। শুধু এটিই নয়, স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল পাইসের তথ্যানুযায়ী অ্যান্ডোরায় গার্দিওলার একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টও আছে। কাতার স্টারস লীগে খেলে গার্দিওলা যা আয় করতেন, তা এই অ্যাকাউন্টেই জমা রাখতেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত সে অ্যাকাউন্ট চালু ছিল। এরপরই ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন গার্দিওলা।

খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টেনে গার্দিওলা ২০০৭ সালে স্পেনে ফিরে দায়িত্ব নেন বার্সেলোনা যুব দলের। তখন পাকাপাকিভাবে স্পেনে ফিরেছিলেন। স্পেনে ফেরার পর দেশটির কর কর্তৃপক্ষের কাছে আর্থিক তথ্য দাখিল করতে হয়েছিল। সেখানেই গোঁজামিল দিয়েছিলেন গার্দিওলা। যদিও পার পেয়েছিলেন না তিনি। তবে স্পেন সরকারের দেয়া একটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে কর সংক্রান্ত ঝামেলা থেকে মুক্ত হন গার্দিওলা। ২০১২ সালে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় কর ফাঁকি দেওয়া মানুষদের জন্য একটা সুবিধা করে দিয়েছিলেন। গোপন আর্থিক লেনদেনকে নীতিসিদ্ধ করার জন্য সে অর্থের ১০ শতাংশ সরকারকে দিলেই আর কোনো ঝামেলা হবে নাÑএমন একটা নিয়ম করেছিলেন রাজয়। গার্দিওলা সে নিয়মের সুবিধাই নিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক