নিজস্ব প্রতিবেদক
বন্ধ থাকা প্রায় ২৪টি বিদেশি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে। বিজ্ঞাপন ছাড়া কিংবা ক্লিন ফিড সরবরাহ করে, এমন টিভি চ্যানেলগুলো দেখানো হচ্ছে। রাজধানীর ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় চ্যানেলগুলো দেখা যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে এমন চ্যানেলগুলোও বন্ধ করা হয়েছিল।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদসংলগ্ন হাউজিং লিমিটেডের স্কাই কেবল নেটওয়ার্কের অপারেটর মোহাম্মদ সাকিব জানান, আজ (গতকাল) সকাল থেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, আলজাজিরা, সিএনএন, বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেল সম্প্রচার করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপন ছাড়া যেসব চ্যানেল অনুষ্ঠান দেয়, সেগুলো সম্প্রচার শুরু করা হয়েছে।’
কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাবেক মহাসচিব নিজাম উদ্দিন মাসুদ বলেন, ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে ২৪টি বিদেশি টিভি চ্যানেলের তালিকা পাওয়ার পর সেগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।’ তবে সাভারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এসব চ্যানেল এখনো দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তিনি জানান, সরকারের নির্দেশনা সবার হাতে গিয়ে এখনো পৌঁছেনি। অচিরেই সারা দেশে চ্যানেলগুলো চালু হবে।
সরকারি নির্দেশনা মানতে গিয়ে গত শুক্রবার ৬০টির মতো বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় পরিবেশক ও অপারেটররা।
এদিকে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ থাকার বিষয়ে বেশ কয়েকজন কেবল অপারেটর নাম না প্রকাশ করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতের চ্যানেলগুলো না চললে ব্যবসা খারাপ হতে পারে। কারণ ভারতীয় চ্যানেলের দর্শক অনেক বেশি।’ বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন শাহেলা আখতার। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্লিন ফিডের ব্যবস্থা রেখে বিদেশি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করা উচিত। ভারতের অনেক চ্যানেল সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে সম্প্রচার করা হয়। আমার জানা মতে, সেখানে ক্লিন ফিডের ব্যবস্থা আছে।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ অভিযোগ করেন, একযোগে সব বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করতে গিয়ে ক্লিন ফিড দেয়, এমন ১৭টি টিভি চ্যানেলও বন্ধ রেখেছে পরিবেশক ও কেবল অপারেটররা, যা আইনের পরিপন্থী। মন্ত্রীর হুঁশিয়ারির মধ্যে অপারেটররা জানিয়েছিল, ওই সব চ্যানেলের তালিকা পেলে তারা সম্প্রচার করবে।
পরবর্তী সময়ে ক্লিন ফিড দেয়, এমন ২৪টি টিভি চ্যানেলের তালিকা দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। চ্যানেলগুলো হলো—বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা এইচডি, ডিডাব্লিউ, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, এআরআই র্যাংগ টিভি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স ২৪, লোটাস, ট্রাভেল এক্সপি এইচডি, আল কুরান, আল সুন্না, টেন স্পোর্টস, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, দুবাই সেপার্টস, মাস্তি টিভি, বিফোরইউ মিউজিক, এমটিভি, স্টার স্পোর্টস ১, স্টার স্পোর্টস-২, স্টার স্পোর্টস-৩, স্টার স্পোর্টস-৪।
অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সহসভাপতি মোজাম্মেল বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলো আইনসম্মতভাবে বন্ধ আছে। কারণ ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান দেখানো যাবে না। বাংলাদেশের একটি অনুষ্ঠান যখন যুক্তরাজ্য কিংবা অন্যান্য দেশে দেখানো হয়, তখন বিজ্ঞাপনমুক্ত করে দেখানো হয়। ফলে বাইরের দেশগুলো ইচ্ছা করলেই বিজ্ঞাপনমুক্ত করে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারে। সরকার এ ব্যাপারের কঠোর পদক্ষেপ নিলে অচিরেই বিজ্ঞাপনশূন্য করে অনুষ্ঠান পাঠাবে।’
তিনি জানান, সরকার প্রচার করতে বাধা দেয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে বিজ্ঞাপনমুক্ত করে পাঠাতে হবে। ফলে এটি তাদের ওপর নির্ভর করছে।
কোয়াবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার পারভেজ কালের কণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব চ্যানেলের কথা বলা হয়েছে তাদের সম্প্রচার চলছে। পরবর্তী নির্দেশনা এলে মুক্ত বিজ্ঞাপন ছাড়া যে চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে, সেগুলো সম্প্রচার করা হবে।