- নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দের পর সংশ্লিষ্টদের নামে এফডিআর, ঋণ হিসাব, এলসি থাকলে সব ধরনের কাগজপত্র, হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল, লেনদেন বিবরণী ও সংশ্লিষ্ট সবধরনের দলিল পাঠাতে বলেছে। পাশাপাশি নমিনির তথ্য এবং নমিনিদের নামে কোনো হিসাব থাকলে তাও জানাতে বলা হয়েছে।
বিএফআইইউর এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ইভ্যালি ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে পরিচালিত সব ধরনের হিসাবের তথ্য পাঠাতে হবে। ২০২০ সাল থেকে তাদের হালনাগাদ লেনদেনের বিবরণী, ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি জমা ও উত্তোলনের জমা রসিদ বা চেকের কপি (ওয়াক-ইন কাস্টমারের ছবিযুক্ত আইডিসহ) পাঠাতে হবে।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই শাখা গত বছর ইভ্যালির অ্যাকাউন্ট তলব এবং পরবর্তীতে ফ্রিজ করে। তখন ইভ্যালি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়।
এদিকে, চলতি বছরের জুনে ৩০ জুন ধামাকা শপিংয়ের ব্যাংক হিসাব তলবের পর কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন কেবল ধামাকা শপিংই নয়, আলিশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, কিউকম, দালাল প্লাস, ই-অরেঞ্জ এবং বাজাজ কালেকশনসহ ১১টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করে বিএফআইইউ। এর পরের মাসে (আগস্ট) অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের চেয়ারম্যান সোনিয়া মেহজাবিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুকুর রহমানের ব্যাংক হিসাব তলব করার পর তাদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে বিএফআইইউ।
সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি নিয়ে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে সিআইডিএ উদ্যোগ নেয়। সিআইডির চিঠির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহকদের তথ্য দেওয়ার সুযোগ আছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউর শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। সম্প্রতি অন্তত ডজনখানেক ই-কমার্স কোম্পানির বিভিন্ন কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তবে সবমিলিয়ে কতগুলো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে সে বিষয়ে কোন তথ্য দিতে অপারগতা জানান তিনি। এদিকে ই-কমার্স প্রতারণায় অভিযুক্ত কিউকমের পেমেন্ট গেটওয়ে বা পরিশোধ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (পিএসও) ফস্টারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টের লেনদেন স্থগিত করা হয়। মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুরোধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সূত্র মতে, ফস্টারের বড় গ্রাহক প্রতিষ্ঠান কিউকম। প্রতারণার দায়ে গত ৩ অক্টোবর কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অস্বাভাবিক ছাড়ে পণ্য বিক্রির নামে অর্থ সংগ্রহসহ বিভিন্ন অভিযোগে এর আগে গত জুনে যে ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকগুলো কার্ড লেনদেন স্থগিত করে তার মধ্যে কিউকম অন্যতম।
এদিকে, সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা গেছে, শুরুতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে ‘অস্বাভাবিক’ সব অফার দেয়। পরে দেখা যায় যে, অগ্রিম অর্থ নিলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা সময়মতো গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারি দেয়নি। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য সরবরাহকারী বা মার্চেন্টরা বলছেন, দিনের পর দিন তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানই এর আগে অবিশ্বাস্য অফারের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, তখন সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে পরবর্তীতের এ ধরনের প্রতারণার দুঃসাহস দেখাতে পারতো না বাকিরা।