বিশেষ প্রতিনিধি
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আরও সোয়া দুই বছর। করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় দুই বছর মাঠের রাজনীতি একেবারে বন্ধ ছিল। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল নিজেদেরে নির্বাচনী মাঠ গোছাতে শুরু করেছে। এরমধ্যে বিএনপি এখনো মাঠে নামার ইস্যু ঠিক করতে পারেনি। সরকার পতনের আন্দোলন নাকি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এই দুই এজেন্ডা নিয়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকান্ডের পাশাপাশি ত্রাণ ও করোনা সামগ্রী নিয়ে মাঠে কিছুটা সরব থাকলেও সংসদের বাইরে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও অন্যান্য দলের কর্মকান্ড একেবারেই বন্ধ ছিল। ফলে করোনার প্রকোপ হ্রাস এবং ‘লকডাউন’ তুলে নেওয়ার পর পর সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং পেশাজীবীদের নিয়ে সিরিজ বৈঠক করেছে। কীভাবে মাঠে নামবে এবং আন্দোলন ও নির্বাচনী প্রস্তুতির কৌশল ঠিক করতেই এই বৈঠকগুলো করছে দলটি। তবে কবে তারা রাজনীতির মাঠে নামবে সেটি এখনো চূড়ান্ত করেনি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। আমরা সব সময়ই নির্বাচনকে প্রাধান্য দিই। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাউন্সিল ও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করা, দলের মধ্যে ছোট-বড় বিবাদ মিটমাট এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাই দলীয় প্রধানের নির্দেশনা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন বানচাল করতে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের দায়িত্ব হলো সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নির্বাচনমুখী করা। আওয়ামী লীগ সেই কাজ শুরু করেছে। দলের মধ্যে যেসব বর্ণচোরা রয়েছে তাদেরও খুঁজে বেরা হবে। আমাদের হাতে দুই বছরের মতো সময় আছে। এরমধ্যে দলকে সংগঠিত করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শ নিচ্ছি। তাদের পরামর্শগুলো দলের স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা ও পর্যালোচনা করে আগামীর কর্মকৌশল ঠিক করব। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফার আন্দোলনে যাব নাকি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে যাব সেটি পরে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেব।’
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে স্কাইপে বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি জেলার সব ইউনিটের কমিটি করে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের মহানগর আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আমাদের ঢাকার সব ইউনিটের কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে আসতে শুরু করলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দুই বছরের মাঠের ঘাটতি মেটাতে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের মধ্যে কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে কোথাও কোথাও। আগামী নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের ভেতর ঝগড়া-বিবাদ ও কলহ তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট। তাই আগামী নির্বাচনে দল সবার আগে দলীয় শৃঙ্খলার দিকেই বেশি মনোযোগী। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের মাঠ গোছাতে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানো।
এদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। তারা সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরকারের সমালোচনায় সরব থাকবে। আগামী নির্বাচনে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপা ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনায়ও জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে ছিল। সংসদে এবং সংসদের বাইরে জাতীয় পার্টি সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা করেছে। আর দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড চলছে।’ নতুন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি আগামীতে এককভাবেই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। তারা এরইমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ গত দুই মাসে ১০টিরও বেশি জেলা ও থানা পর্যায়ের কমিটি নিয়ে বৈঠক করেছে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর পুনর্গঠন ও সম্মেলনে করবে। এর পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমেও তারা রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখার কর্মসূচি নিয়েছে।