কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে মাদরাসা শিক্ষার্থী তুহিন আহমদ হত্যার প্রধান আসামি আয়ান বাউরীকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ৮ দিন পর রহস্য উদঘাটন করে ঘাতক আয়ানকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের ডবলছড়া চা বাগান এলাকা থেকে আয়ানকে গ্রেপ্তার করে। ঘাতক আয়ান ডবলছড়া চা বাগানের বাসিন্দা মৃত বসু বাউরীর ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১১ অক্টোবর সোমবার রাতে আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে বাবনিয়া নিজামিয়া আলিম মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র তুহিন আহমদকে রাঙ্গিছড়া চা-বাগানের ১ নম্বর সেকশনের ভেতর দা দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব বাবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সজ্জাদ আলীর ছেলে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তুহিনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। লাশ উদ্ধারের পর ১২ অক্টোবর নিহত তুহিনের বাবা সজ্জাদ আলী বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পরই হত্যারহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই আব্দুর রহিম জিবান ও শাহ আলম সঙ্গীয় ফোর্সসহ শমশেরনগরের ডবলছড়া চা বাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আয়ান বাউরীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ আরো জানায়, মামলার প্রধান আসামি আয়ান কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের ভালাইরমা পুঞ্জিতে শ্রমিকের কাজ করতো। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সেখানকার কাজ ছেড়ে সে স্থানীয় রাঙ্গিপুঞ্জিতে যোগ দেয়। যা আয় হতো তার কিছু অংশ মাঝেমধ্যে বাড়িতে পাঠাতো আয়ান। কিন্তু শারদীয় দুর্গাপূজায় তার টাকার প্রয়োজন পড়ে। এই টাকা জোগাতে সে ছিনতাইয়ের কথা ভাবে। তার পরিকল্পনা ছিল, রাঙ্গীছড়া চা বাগানের ১ নম্বর সেকশনে ভেতরের পূর্ব পাশের রাস্তা দিয়ে কোনো খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোক গেলে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে টাকা লুট করবে সে। ঘটনার দিন রাতে ওই রাস্তা দিয়ে কোনো খাসিয়া যায়নি। ঘটনাক্রমে তখন মাদরাসাছাত্র তুহিন ওই রাস্তা দিয়ে রাঙ্গিছড়া চা বাগানের পাশে মনছড়া এলাকায় তাদের পানজুমে বাবার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। তখন রাত ৯টার মতো বাজে। আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা আয়ান তুহিনের গতিরোধ করে এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর তুহিনের ঘাড়ের পেছনে দা দিয়ে কোপ দেয় সে। তুহিনকে ওই অবস্থাতেই বাগানের রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় আয়ান। ঘটনাস্থলে তুহিন মারা যায়। আর ঘাতক আয়ান তুহিনের সঙ্গে থাকা ম্যানিব্যাগে ৫২০ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর ঘাতক আয়ানকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে কমলগঞ্জের ডবলছড়া চা বাগান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহিম জিবান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামি আয়ান বাউরীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত দা ও নিহত তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, টাকার জন্য আয়ান দা দিয়ে ওই মাদরাসাছাত্র তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। গ্রেপ্তারের পর প্রধান আসামিকে বুধবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।