হাতে ওয়াকিটকি সেট, কোমরে হ্যান্ডকাপ, গায়ে পুলিশের ইউনিফর্ম পরে রাতের আঁধারে টর্চলাইট দিয়ে মহাসড়কে চলাচলরত গাড়ি থামানোর সংকেত দিত ডাকাত দলের প্রধান শামিম রেজা। তাদের পুলিশ ভেবে চালকরা গাড়ি থামালেই ছিনিয়ে নিত তাদের সর্বস্ব।
এমন অভিনব কৌশলে দীর্ঘদিন ডাকাতির পর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার সাভারে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় শামিম রেজাসহ ডাকাত দলের ৬ সদস্য। র্যাব-৪ এর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করে।
র্যাব-৪ প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ডাকাত সরদার মো. শামিম রেজা কিশোর বয়স থেকেই অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। গ্রামের একটি স্থানীয় স্কুল থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে সে। কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে ঢাকায় এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে সে।
এরপর রেজা একটি ডাকাত বাহিনী গড়ে তুলে। সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি অভিনব কৌশলে হাতে ওয়াকিটকি সেট, কোমরে হ্যান্ডকাপ, গায়ে পুলিশের ইউনিফর্ম পরে রাতের আঁধারে টর্চলাইট দিয়ে মহাসড়কে চলাচলরত গাড়ি থামানোর সংকেত দিত। তাদের পুলিশ ভেবে চালকরা গাড়ি থামালেই ছিনিয়ে নিত সর্বস্ব।
তার নামে অস্ত্র, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। রেজা নিজেকে পুলিশ বাহিনীর একজন সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পরিচয় দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, নকল আগ্নেয়াস্ত্র, নকল আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করত।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য ছায়া তদন্ত শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকালে সাভারের পশ্চিম রাজাশন এলাকায় ডাকাত দলের সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিল। এ সময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাসব সদস্যরা রাজাশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো— ডাকাত সরদার মো. শামীম রেজা (৩০), মো. হেলাল উদ্দিন (৩৫), মো. পারভেজ (২৫), ওয়াসিম ইসলাম (২৫), মো. নাইম খান (২৭), মো. ফেরদৌস আহমেদ রাজু (২৯)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, একটি নকল পিস্তল, একটি পিস্তল টাইপ লাইটার, একটি কভারসহ হ্যান্ডকাপ, একটি ওয়াকিটকি, দুই সেট পুলিশের ইউনিফর্ম, পুলিশ জ্যাকেট, পুলিশ বেল্ট, ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, দুটি রামদা, একটি ডেগার, একটি চাপাতি, দুটি ছুরি, দুটি টর্চলাইট, দুটি রশি, ৪৬৭ পিস ইয়াবা, ত্রিশ বোতল ফেনসিডিল, দেড় কেজি গাঁজা, সাত গ্রাম হেরোইন, পাঁচ লিটার চোলাইমদ, ১৯টি মোবাইল এবং নগদ ৪৪৫৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৪ সিপিসি-২ কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে সাভারসহ বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় ডাকাতির প্রস্তুতি, অস্ত্র, ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণার ঘটনায় সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।