হামিদুর রহমান: গত তিন বছর ধরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে (গাসিক) অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাচ্ছে না। অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে গুটিকয়েক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর প্রায় তিন বছর ধরে ৩৫০টির মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছেন না। তবে নানা ভয়ে প্রতিবাদ করছেন না ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রায় ৩৫০টির মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করছে না। অবৈধ পন্থায় স্বার্থান্বেষী মহলের পকেট ভারি করতে সিন্ডিকেটের বাইরে কাউকে কাজ দেয়া হচ্ছে না। এতো কিছুর পরেও ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে বহু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে না। সিটি করপোরেশনে অনেক চেষ্টা করেও লাইসেন্স নবায়ন করতে পারিনি। আমার মতো বহু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছে না।’ এসব নিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর ক্ষোভ থাকলেও কেউ মুখ খুলছেন না। অনেক বড় নেতাও তার বিরুদ্ধে কথা বলেন না।’
আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, ‘লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় কাজ নেই। গত তিন বছরে জমানো টাকা থেকে সংসার চালালেও এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এখন কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আগে অন্য ব্যবসা থাকলেও ঠিকাদারির পর থেকে সেটা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর সেই ব্যবসায় ফিরে যাওয়ার অবস্থাও নেই। কার কাছে যাব, কাকে বলব? সিটি করপোরেশনে বহু দৌড়িয়েছি, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে গাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য আমাদের একটি কমিটি আছে। তারাই এটি যাচাই-বাছাই করে। লাইসেন্স নবায়নের ব্যাপারে আমার চেয়ে কমিটিতে যারা আছে তারা ভালো বলতে পারবে।’
লাইসেন্স নবায়ন কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আকবর হোসেনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও গাজীপুরে অনেক মানুষের ক্ষোভ রয়েছে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। রাস্তা বাড়ানোর জন্য বাসাবাড়ি ভাঙা হলেও তার ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত দেয়া হয়নি স্থানীয়দের। গাসিক কর্তৃপক্ষ জায়গা দখল করতে গিয়ে মালিকদের কোনো ক্ষতিপূরণও দিচ্ছে না। সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করতে গিয়ে বসতভিটা ও দোকানপাটের জায়গা দখল করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভাণ্ডারী বাজার, বসুগাঁও ও মিরেরবাজার এলাকার বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি।
বসুগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার মৃধা বলেন, তিনটি স্থানের প্রায় সাত কাঠা জায়গা সড়কে চলে যাচ্ছে। প্রতি কাঠার দাম প্রায় ১৩ লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, নিজেদের জায়গা খালি করে দিতে হয়েছে। অন্যথায় মহানগর কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে স্থাপনা ভেঙে ফেলবে বলে জানিয়েছে।
মিরেরবাজার এলাকার আরেক বাসিন্দা সাইফুর রহমান জানান, তার বাসাটি আড়াই কাঠার ওপর নির্মিত। তার মধ্যে দেড় কাঠা যাচ্ছে সড়কে। এখন তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেবেন, সেই চিন্তায় দিন গুনছেন। তার মতো অনেকে এভাবে নিঃস্ব হচ্ছেন সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তে।
ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জমির অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে গাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সড়ক প্রশস্ত করতে অধিগ্রহণের জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ নেই। রাস্তার প্রয়োজন সবার। যেহেতু সরকারিভাবে অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ নেই, তাই গাজীপুরে মন্ত্রীসহ সরকারের প্রতিনিধিরা বসেই এই প্রজেক্ট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কারণ প্রজেক্ট যদি ফিরে যায়, তখন নানা জটিলতায় তা আর হয়ে বাস্তবায়ন হয় না।’