নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনকনট্রেড লিমিটেডের প্রায় তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকি স্বীকার করে ফাঁকি দেয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা করেছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ইনকনট্রেড লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি লালদিয়ার চর, পূর্ব পতেঙ্গা, চট্টগ্রামে (ভ্যাট নিবন্ধন নং-০০২২৪৮৭১৩-০৫০৩) অবস্থিত। ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের ওপর তদন্তটি পরিচালনা করেন। তদন্তে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি সেবা প্রদানকারী হিসেবে নিবন্ধিত বিধায় মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এবং একই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালার বিধি অনুযায়ী মূসক-সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিলাদি যেমন: চালানপত্র (মূসক-১১), বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-১৭), দাখিলপত্র (মূসক-১৯) ইত্যাদি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তা সংরক্ষণ করেননি; যা মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৩১ ও একই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালার বিধি ২২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
প্রতিষ্ঠানটির দাখিল করা সিএ ফার্ম কর্তৃক বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তকালীন প্রতিষ্ঠানের আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন তথ্যাদি ও বক্তব্য আমলে নেয়া হয়েছে। আরও দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি উৎসে কর্তন খাতে কোনো ভ্যাট পরিশোধ করেনি। এই সময়ে কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৬ টাকা। পূর্বে কোনো ভ্যাট পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮৬ টাকা আদায়যোগ্য হয়েছে।
উৎসে কর্তন বাবদ এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২১ লাখ ৮০ হাজার ৩২৮ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য। তাছাড়া তদন্ত
মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অডিট রিপোর্টে প্রদর্শিত বিক্রয়মূল্যের তুলনায় দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য কম প্রদর্শন করায় অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার ৬১৩ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৩ হাজার ৭১০ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য।
প্রতিষ্ঠানটি অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯১ হাজার ৯৯ টাকা এবং সুদ বাবদ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৪ হাজার ৩৮ টাকাসহ সর্বমোট ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৭ টাকা সরকারি রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বেচ্ছায় ইতোমধ্যে তদন্তে উদঘাটিত সমুদয় ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৫৫ হাজার ১৩৭ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে অবহিত করেছে। তদন্তে উদঘাটিত রাজস্ব পরিহারের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাটি আইনানুগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।