ইনস্টাগ্রাম-টুইটার দ্বৈরথ  পুরনো শত্রুতা ভুলে সামনে এগোনোর আভাস

ইনস্টাগ্রাম-টুইটার দ্বৈরথ পুরনো শত্রুতা ভুলে সামনে এগোনোর আভাস

বিভিন্ন ইস্যুতে তীব্র বিরোধ থাকলেও উন্মুক্ত ইন্টারনেট নিয়ে আসার ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দিচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। আগামী দিনগুলোতে মেটাভার্স নির্মাণে পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া কোনো গতি দেখছে না তারা।

নয় বছর ঝুলিয়ে রাখার পর গত বুধবার নতুন একটি ঘোষণা দেয় ইনস্টাগ্রাম। এখন থেকে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা কোনো ছবি টুইটারেও পুরোপুরি দেখা যাবে। ২০১২ সাল থেকে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা ছবি টুইটারে প্লেন টেক্সট লিংক আকারে দেখা যাচ্ছিল। টুইটার পোস্টে ক্লিক করলে ফের ইনস্টাগ্রামে ছবিটি দেখা যেত। অবশ্য ২০১২ সালে ফেসবুক কিনে নেয়ার পর ইনস্টাগ্রামে এ নিয়ম চালু হয়েছিল। এর আগে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা ছবি টুইটারসহ বিভিন্ন সোস্যাল প্লাটফর্মে শেয়ার করা যেত। তীব্র প্রতিযোগিতা এবং পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল ইনস্টাগ্রাম। সম্প্রতি তিক্ততা প্রশমনের ইঙ্গিত দিয়ে নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টে এক টুইট করে ইনস্টাগ্রাম। বুধবারের টুইটে ইনস্টাগ্রাম লেখে, তারা বলেছিল এমনটা আর কখনো হবে না।

এ সমঝোতার পেছনে উভয় প্লাটফর্মের মধ্যে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্দার আড়ালে বেশ আলোচনা হয়েছে সেদিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

২০১০ সালের অক্টোবরে ইনস্টাগ্রাম যখন যাত্রা শুরু করেছিল, তখন তাদের প্লাটফর্মের ছবি টুইটারে শেয়ার করা ছিল অনেক সহজ। ওই সময়টাতে টুইটার প্লাটফর্মে সরাসরি ছবি পোস্ট করা যেত না। ওয়াইফ্রগ ও ফটোবাকেটের মতো থার্ড পার্টির বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে ছবি শেয়ার করতে হতো। শিগগিরই টুইটে ছবি শেয়ারের জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হয়ে দাঁড়ায় ইনস্টাগ্রাম।

এছাড়া টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আগে থেকেই বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক ছিল। টুইটার সিইও জ্যাক ডরসি এবং ইনস্টাগ্রামের সহপ্রতিষ্ঠাতা কেভিন সিস্ট্রম অডিও নামে একটি প্লাটফর্মে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। জ্যাক ডরসি নিজেই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবি টুইটারে শেয়ার করতেন। জ্যাক ডরসির সঙ্গে সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে প্রবেশ করে জাস্টিন বিবার ও স্নুপ ডগের মতো সেলিব্রিটি। সহজেই ইনস্টাগ্রামে ছবি শেয়ারের মাধ্যমে টুইটার উপকৃত হয়েছে। আবার সদ্য চালু হওয়া ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তায় ভূমিকা রেখেছে মাইক্রোব্লগিং সাইটটি।

কিন্তু টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের এ মধুর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হলো না। ২০১২ সালের এপ্রিলে ৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ইনস্টাগ্রাম কিনে নেয় ফেসবুক। এ সময় ইনস্টাগ্রাম কিনে নেয়ার দৌড়ে ছিল টুইটারও। কিন্তু কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করা এবং বিশাল অডিয়েন্সের কাছে ইনস্টাগ্রাম পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তা কিনে নেয় ফেসবুক। এতে ব্যক্তিগতভাবে আহত হওয়া জ্যাক ডরসি ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করাই ছেড়ে দেন। এমনকি টুইটারে পারস্পরিক সংযুক্ত বন্ধুরা ইনস্টাগ্রামে যুক্ত হওয়ার যে সাজেশন পেত, তাও ব্লক করে দেয় মাইক্রোব্লগিং সাইটটি।

ওই বছরের ডিসেম্বরে আরো কঠিন পদক্ষেপ নেয় ফেসবুক। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবি টুইটারে শেয়ার করা হলে তা আর টুইটার টাইমলাইনে দেখা যাবে না। নো ফিল্টার নামে একটি বইয়ে সারাহ ফ্রায়ার বলেন, ফেসবুক শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছিল টুইটারে ইনস্টাগ্রামের ফটো প্রিভিউ শেয়ার প্লাটফর্মটির সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত এবং বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি করছে। ফেসবুকের এ পদক্ষেপে টুইটারের ক্ষোভ আরো বেড়েছে।

নয় বছর চলে গেল। ২০১৮ সালে ফেসবুক ছেড়ে চলে যান ইনস্টাগ্রামের সহপ্রতিষ্ঠাতারা। এরই মধ্যে ফটো শেয়ারিং প্লাটফর্মটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটি ছাড়ায়। টুইটারও তাদের সেবায় অনেক পরিবর্তন আনে এবং বিভিন্ন প্লাটফর্মের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে।

তবে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যখন প্রাইভেসি, তথ্য পাচার ও একচেটিয়া ব্যবসা নিয়ে কড়া নজরদারি ও কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে, তখন অনেক প্লাটফর্মই নিজেদের বিরোধ মীমাংসার দিকে এগোচ্ছে। কীভাবে একসঙ্গে কাজ করা যায়, তা খুঁজতে ইনস্টাগ্রামের সিইও অ্যাডাম মসেরিকে সরাসরি বার্তা পাঠিয়েছেন টুইটার প্রতিষ্ঠাতা ডরসি। সম্প্রতি একসঙ্গে পিজা খেয়েছেন ইনস্টাগ্রাম সিইও মসেরি ও টুইটারের বিজনেস হেড বেইকপাউয়ার।

টুইটারের উচ্চপদস্থ এ কর্মকর্তাকে মসেরি আশ্বস্ত করেন, টুইটার টাইমলাইনে ছবি দেখানোর ক্ষেত্রে ইনস্টাগ্রামের কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। তারা এ নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান। সম্প্রতি মসেরি জানান, পুরনো বিরোধ চাপা দেয়াই উত্তম বলে মনে করি।

মেটাভার্স নির্মাণে মার্ক জাকারবার্গ যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্লাটফর্মের পারস্পরিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে আরো উদার ও উন্মুক্ত হওয়া যায়, সব প্লাটফর্মকেই তা খুঁজে দেখতে হবে বলে মনে করেন মসেরি।

টুইটারের বেইকপাউয়ার একই সুরে বলেন, মানুষ কেবল এক প্লাটফর্মই ব্যবহার করে না। একজন ব্যবহারকারী সাধারণত একই সঙ্গে দুই বা ততোধিক প্লাটফর্মে সক্রিয় থাকেন। ব্যবহারকারীরা যদি বিভিন্ন প্লাটফর্ম সমানতালে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে প্লাটফর্মগুলোর কর্তাব্যক্তিদের একত্রিত হওয়ার পথে বাধা থাকার কথা নয়। প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ অভিমুখ বিবেচনায় পারস্পরিক বিরোধ মীমাংসা করে সোস্যাল প্লাটফর্মগুলোর সমঝোতাতেই মুক্তি দেখছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।

—দ্য ভার্জ অবলম্বনে

তথ্য প্রুযুক্তি