প্রশ্ন ফাঁসে ৩ ছাত্রের মেসেঞ্জার গ্রুপ সদস্য হতে লাগে ২ হাজার টাকা * হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা

প্রশ্ন ফাঁসে ৩ ছাত্রের মেসেঞ্জার গ্রুপ সদস্য হতে লাগে ২ হাজার টাকা * হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা

কারিমুল্লাহ, আব্দুল্লাহ আল মারুফ তপু ও আল রাফি টুটুল। তিনজনই কলেজের ছাত্র। এরা মেসেঞ্জার গ্রুপ তৈরি করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রুপের সদস্য হতে পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দিয়ে হয়। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশি। ইতোমধ্যে এই তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হলে প্রশ্ন ফাঁস করার নামে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায়। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিত যে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা এবং জেলা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে প্রশ্ন সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে। সেই ছবি তারা বিভিন্ন জনকে মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাফে এবং ই-মেইলে সেন্ড করে দেবে। এ কথা বলে তারা নগদ, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রতিটি প্রশ্নের বিপরীতে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এ প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপের ফলোওয়ার সংখ্যা প্রায় ৪৭০০ জন। ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত কারিমুল্লাহ টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, আল রাফি ওরফে টুটুল মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিকের দ্বিতীয় বর্ষে ছাত্র ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাদের পরিচালিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মেসেঞ্জার, ফেসবুক পাবলিক গ্রুপগুলো হলো-কোশ্চেন ব্যাংক, এসএসসি কোশ্চেন ২০২১, এইচএসসি কোশ্চেন ২০২১, কোশ্চেন লিংক, PSC, JSC, SSC, HSC- All Exam Helping Zone, SSC-2021 All Board ইত্যাদি। গ্রেফতারকৃত আল রাফি টুটুল পাবজি খেলায় পারদর্শী এবং সাইবারসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। সে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য আলমগীর হোসেন নামে একটি ফেইক আইডি খোলে।

ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের ডিবি কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারও পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা সম্ভব নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবে কান দেবেন না। তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তিনি বলেন, যেসব চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, চক্রের সদস্যরা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু তারা প্রশ্ন ফাঁস করতে পারেনি। তাদের পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা অসম্ভব ছিল। তিনি বলেন, কিছু ছাত্র ও অভিভাবক পড়াশোনাতে মনোযোগ না দিয়ে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র কেনার জন্য ব্রাউজ করতে থাকে। গ্রেফতারকৃতরা মূলত এসব অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নানা আকর্ষণীয় প্যাকেজের অফার দিত ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে।

তথ্য প্রুযুক্তি