বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ- এমন অভিপ্রায় সামনে রেখে শনিবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে দুই দিনের শান্তি সম্মেলন। বাংলাদেশ যে বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে, এই সম্মেলনে সেই বার্তা সবার কাছে পৌঁছাতে চায় ঢাকা। বিদেশী অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘শান্তি ও সম্প্রীতির দেশে স্বাগতম’।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী শান্তি ও মানবিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই ৪ ডিসেম্বর (শনিবার) ঢাকায় শুরু হচ্ছে বিশ্ব শান্তি সম্মেলন।’
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শনিবার বেলা আড়াইটায় দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ‘অ্যাডভান্সিং পিস থ্রু সোশ্যাল ইনক্লুশন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তিনি। পরদিন রোববার সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সোনারগাঁও হোটেল ও ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে হবে শান্তি সম্মেলনের বিভিন্ন আয়োজন। উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠান হবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। প্যানেল আলোচনা হবে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবারের সম্মেলন সশরীরে ও ভার্চুয়াল- দুই মাধ্যমের অধিবেশনই থাকছে। সম্মেলনে ‘ঢাকা শান্তি ঘোষণা’ গৃহীত হবে। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর নামে সম্মাননা দেয়া হবে। বৈশ্বিকভাবে যেসব মানুষ শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছেন, বিশেষ করে কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, বিজ্ঞানীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মেলনে সম্মানিত করা হবে।
ঢাকায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ‘সিনেমা ফর পিস’নামের দুই দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবের। জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শনি ও রোববার এই উৎসবে চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। সেগুলো হলো- ব্যালাড অফ আ সোলজার, দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং, ওয়ার অ্যান্ড পিস ও অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী। এ জন্য কোনো টিকিট লাগবে না।
বিশ্ব শান্তি নিয়ে কাজ করা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবি, সাহিত্যিক, নোবেল বিজয়ী, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী, চলচ্চিত্রকার, থিংক ট্যাংক ও সাবেক রাজনীতিকরা সম্মেলনে অংশ নেবেন। ধর্মীয় ইস্যুতে ভ্যাটিকান সিটি থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল থেকেও কিছু ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আমন্ত্রিত শতাধিক অতিথির জন্য চারটি প্যানেল ডিসকাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সম্মেলনের শুরুর দিন দুটি এবং সমাপনী দিনে দুটি প্যানেল ডিসকাশন হবে। এসব প্যানেল ডিসকাশনে যোগ দিয়ে অতিথিরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।
সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন ৩৪ জনের মতো ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চক তং, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ভারতের কৈলাশ সত্যার্থীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রয়েছেন।
আর ৬০ থেকে ৬৫ জনের মতো অতিথি সশরীরে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন শ্রীলঙ্কান ইউনিভার্সিটি অফ কলম্বোর উপাচার্য অধ্যাপক চান্দ্রিকা এন ওয়াজেয়ারতে, ভারতের চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ, ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভুসহ অনেকে।
সম্মেলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শান্তির অগ্রদূত। উপমহাদেশসহ সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু আজীবন কাজ করে গেছেন এবং সে জন্যই তিনি আমাদের বৈদেশিক নীতি করেছেন- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ ড. মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন- পিস ইজ ইম্পারেটিভ ফর ডেভেলপমেন্ট। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও বাবার পথ ধরে এই পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছেন। তিনিও সব সময় শান্তির অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীতে সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ কমানোর জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেটি হচ্ছে শান্তির সংস্কৃতি। প্রস্তাবটি পৃথিবীর সব দেশ গ্রহণ করেছে। জাতিসঙ্ঘে প্রধানমন্ত্রী যে শান্তি-সংস্কৃতির ধারণা দিয়েছেন, সেটিও আমরা তুলে ধরব।
‘পৃথিবীতে টেকসই শান্তির জন্য প্রয়োজন একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, সহনশীলতা। এগুলো আমরা তুলে ধরব। এই সম্মেলন বিশ্বে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সহযোগিতা করবে। এ জন্যই আমাদের এ আয়োজন।’
‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন’ উপলক্ষে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে একটি প্রীতি টি-১০ ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করে। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহায়তায় আয়োজিত এই ম্যাচে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটাররা ‘টিম হারমনি’ ও ‘টিম ইউনিটি’ নামে ভাগ হয়ে অংশ নেন।
সম্মেলন উপলক্ষে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর শান্তি দর্শনের আলোকে শান্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোচনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শান্তি ঘোষণা’ শীর্ষক সর্বসম্মত ঘোষণার মাধ্যমে সম্মেলন শেষ হবে।
সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার সোনারগাঁও হোটেলে ডিনার ও সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং শেষ দিন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পিঠা উৎসব হবে।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তি সম্মেলন আয়োজনের অনুমোদন দেন গত মার্চে। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে সভাপতি ও সায়মা ওয়াজেদকে সদস্য সচিব করে ৪৬ সদস্যের আয়োজক কমিটি গঠন করা হয়।