ডেল্টা লাইফ ইন্সু্যুরেন্সের সাড়ে ২৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন

ডেল্টা লাইফ ইন্সু্যুরেন্সের সাড়ে ২৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রায় ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে। গতকাল মামলা করা হয়েছে বলে ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মেসার্স ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ডেল্টা লাইফ টাওয়ার, প্লট-৩৭, রোড-৪৫ (দক্ষিণ) ও ৯০ (উত্তর), গুলশান-২, ঢাকা-১২১২ এ অবস্থিত। ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে একটি দল ডেল্টা লাইফের ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্ত করে। ভ্যাট গোয়েন্দার দল তদন্তের স্বার্থে দলিলাদি দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে তলব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত বার্ষিক সিএ রিপোর্ট, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) ও নানা সময় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিলাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য বিমার ওপর এক কোটি ৯ লাখ ৭৬ হাজার এক টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৯৫৫ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। এতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ আট কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫৪ টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। এ ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে ১০ কোটি এক লাখ ১১ হাজার ৮৫৩ টাকা সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।

আরও দেখা গেছে, তদন্ত অনুসারে নিরীক্ষা মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট মোতাবেক উৎসে ভ্যাট ছয় কোটি ৩৪ লাখ সাত হাজার ৮০৩ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার ২৫২ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ দুই কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার ৫৮৯ টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। উৎসে কর্তনের ওপর প্রযোজ্য এ ফাঁকিকৃত ভ্যাটের ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে তিন কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৭ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।

অন্যদিকে তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে তিন কোটি ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৬৯১ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৫০৬ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৭১৯ টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। এ ফাঁকির ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে ১২ লাখ ৯ হাজার ২৫০ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য হবে।

তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ২৬২ টাকা এবং সুদ বাবদ ১৩ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার ৭৯৯ টাকাসহ সর্বমোট ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬১ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।

তদন্তে আরও দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম নেয়ার জন্য প্রতিবেদনটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মূসক সার্কেল, বিভাগীয় দপ্তর, কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়মিত নজরদারির জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে চেষ্টা করেও ডেল্টা লাইফের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ডেল?টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য সুলতানুল আবেদিন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে ডেল?টা লাইফের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ঘুষ চাওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে চেয়ারম্যান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ এনে ডেল?টা লাইফের সংবাদ সম্মেলন করার মাত্র চার দিনের মধ্যে ওই কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হলো। ডেল?টা লাইফের পক্ষ থেকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে হয়রানি করার অভিযোগ আনা হয়। সেখানে বলা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের হুমকি দিয়ে ঘুষ দাবি করেন। প্রথমে দুই কোটি টাকা, পরে এক কোটি ও শেষে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড তাদের কাছে রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ বিষয়ে প্রমাণসহ অ

অর্থ বাণিজ্য