আ.লীগের সাংগঠনিক সাফল্যের বছর

আ.লীগের সাংগঠনিক সাফল্যের বছর

রফিকুল ইসলাম

বছরজুড়ে ঘর গোছালেন সাংগঠনিক শীর্ষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা
গুজব নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধী রাজনীতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে নিরলস পরিশ্রম করছেন ডজনখানেক নেতা
বিএনপিবিহীন ইউপি ভোটে নতুন অভিজ্ঞতা আ.লীগের
বছর শেষে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তৃণমূলে সন্তোষ প্রকাশ
২০২১ সাল প্রাকৃতিক দুঃসময়ের বছর। করোনা মহামারি ও ডেঙ্গু। মানুষ থেকে মানুষে বিচ্ছিন্নতা দেশজুড়ে। সব অঙ্গনের সাথে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে রাজনীতিতে। কর্মীরা শীর্ষ নেতাদের সরাসরি ছোহবত থেকে ছিলেন দূরে। বছর শেষে সে ঘাটতি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন দলের সাংগঠনিক ডজনখানেক নেতা। দায়িত্ব পালনে ছুটে গেছেন শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তৃণমূলের প্রেসক্রিপশনে তুলে এনেছেন বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব।
দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও গুজব নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সজাগ ছিলেন তারা। হাই-প্রেফাইলের মাঠের এমন কাজে প্রসংশার স্লোগান তুলছেন তৃণমূল নেতারা। শুধু দল নয়, নীরব রাজনীতিতে বছরজুড়েই বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচি, বক্তব্যে ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নজরে রেখেছিল আ.লীগ। খালেদার জিয়ার চিকিৎসাসেবার নামে বিএনপি যেনো সরকারবিরোধী আন্দোলন ও জনভোগান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এম এম কামাল, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ-বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বছরজুড়েই সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিলেন।

তাদের নেতৃত্বে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব, কোন্দল ও বলয়ভিত্তিক রাজনীতি নিরসনে এমপি-মন্ত্রী ও দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নৌকা প্রার্থী নির্ধারণ ও বিজয় নিশ্চিত করা, নৌকাবিরোধীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব গঠনে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা দিতে বিদেশ নিতে বছরজুড়েই দলটির সরকারবিরোধী কর্মসূচি, বক্তব্য ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নজরে রেখেছিলেন ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।

তারা বলছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছিলাম কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত বছর সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে করেছি। চেষ্টা করেছি তৃণমূল আ.লীগকে আরও শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে গঠন করতে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

তথ্য মতে, স্থানীয় সরকারের পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে চলতি বছরজুড়েই উৎসবের আমেজ ছিলো তৃণমূলে। এ নির্বাচনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে আ.লীগকে। এর মাঝেও নৌকার প্রার্থীর নির্ধারণ, ত্যাগী ও মেধাবীদের মূল্যায়ন, বিতর্কিতদের মনোনয়ন না দিতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আ.লীগের হাই-কমান্ড। দল ও দলের সিদ্ধান্তে যারা ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক শাস্তি বহাল রেখেছে দলটি। তৈরি করেছে বিদ্রোহী ও তাদের মদতদাতা এমপি-মন্ত্রী এবং স্থানীয় আ.লীগের প্রভাবশালী নেতাদের তালিকা।

ওই সকল অভিযুক্তদের আগামীতে নৌকার মনোনয়ন না দিতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা দলীয় সভানেত্রীর কাছে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল গঠনে বদ্ধপরিকর ছিলো আ.লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা। তারা জেলা, মহানগর, উপজেলাসহ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিটি ইউনিটির সম্মেলন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কোন্দল নিরসন, বিতর্কিত ও হাইব্রিডমুক্ত দল গঠনে ছিলেন আপসহীন। শক্ত হাতে দূর করেছেন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী ও দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বলয়-ভিত্তিক রাজনীতি। তৃণমূলের সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে তৈরি করেছেন সাংগঠনিক রিপোর্ট। যা আ.লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেছেন তারা। একই সাথে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় ও বিভিন্ন দিবস-ভিত্তিক দল ও সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন আ.লীগের দায়িত্বশীল নেতারা।

রাজনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল করতে সারা দেশে দল ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের নির্দেশনামূলক বক্তব্যে দেন। তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ উজ্জীবিত হয়েছে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী। যদিও গত বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ঘরবন্দি ছিলো আ.লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি। তারা করোনা সংকটে দেশব্যাপী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, মাইকিং, কর্মহীন ঘরবন্দি মানুষের মাঝে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা, ফ্রি টেলিহেলথ সার্ভিস, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, করোনা রোগী বহন, করোনায় মৃত লাশের গোসল, জানাজা, দাফন ও সৎকার, দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দেয়া, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ, ঘূর্ণিঝড় আমফান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে এ বছরের শুরু থেকেই সাংগঠনিক কার্যক্রমে জোর দেন আ.লীগের শীর্ষ নেতারা।

আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘করোনার পর চলতি বছরটি সাংগঠনিক কাজে বেশ সফলতার সাথেই শেষ করতে যাচ্ছি। এ ধারাবাহিকতা আগামীতে অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করতে জেলা, মহানগর, উপজেলাসহ আমার দায়িত্বরত বিভাগের প্রতিটি ইউনিটির নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছি, বৈঠক করছি। সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য নানামুখী নির্দেশনা দিচ্ছি।’

দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় বছরজুড়েই হার্ডলাইনে ছিলো আ.লীগ। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতাযুদ্ধে মহান শহীদদের নিয়ে কটুক্তি এবং নারীবিদ্বেষী বক্তব্যে দল বা সরকারের শীর্ষ কর্তারা কেউ রেহাই পাননি। মন্ত্রী, এমপি ও মেয়র পদের পাশাপাশি হারাতে হয়েছে সাংগঠনিক পদ। যার সর্বশেষ উদাহরণ তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। মূলত ভবিষ্যতে দল বা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেনো কোনোভাবেই দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয় এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আ.লীগ।

দল ও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নয়, নীরব রাজনীতিতে বছরজুড়েই বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচি, বক্তব্য ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নজরে রেখেছিল ক্ষমতাসীন আ.লীগ। মূলত বর্তমানে বেশ আলোচনায় রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদার জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। এ জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা বারবার সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বছরজুড়েই। তারা মানবন্ধন, অনশন কর্মসূচি, অবস্থান কর্মসূচি, প্রতিবাদ সভা, আলোচনা সভাসহ সরকারবিরোধী নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

তবে বছরজুড়েই বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচি, বক্তব্য ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নজরে রেখেছিল ক্ষমতাসীন আ.লীগ। খালেদার জিয়ার চিকিৎসাসেবার নামে বিএনপি যেনো সরকারবিরোধী আন্দোলন ও জনভোগান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছিলাম কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে করছি। চেষ্টা করছি তৃণমূল আ.লীগকে আরও শক্তিশালী করতে। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যেনো আগামী নির্বাচনের আগে আ.লীগ আরও শক্তিশালী সংগঠনের পরিণত হয়।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই দলের জন্য নিবেদিত আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। চলতি বছরেও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে তৎপর ছিলেন তারা। নিজ দলের বিভেদের রাজনীতি নিষ্পত্তি করে চলতি বছরে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের সুফল ঘরে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন তারা। বর্তমান সময়ে সব নেতাই এমপি-মন্ত্রী হতে চান। কিন্তু তারা আ.লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সাংগঠনিক দায়িত্ব সফলভাবে পালন করছেন। দলের প্রয়োজনে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথেও বৈঠক করেন দফায় দফায়।

আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, জেলা-উপজেলা সম্মেলন, কোন্দলন নিরসন ও শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে চলতি বছরে আ.লীগের সকল পর্যায়ের নেতারা বেশ গুরুত্বের সাথে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। করোনার পর সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় বছরটি বেশ ইতিবাচক ছিলো।’

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ