কূটনৈতিক প্রতিবেদক
‘বিষয়টি (নিষেধাজ্ঞা) খুবই দুঃখজনক। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। আলাপ-আলোচনা করেই আমরা উত্তর দেব। হুট করে একটা উত্তর দেওয়া ঠিক হবে না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নীতি-সন্ত্রাস, মাদক চোরাচালান দমনে সফল একটি সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন—র্যাব।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র গত শুক্রবার র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেনদরবার করার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে দায়িত্ব দিয়েছেন।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সরকার প্রাথমিকভাবে র্যাবের সাফল্য ও অর্জনসংক্রান্ত তথ্যগুলো জড়ো করছে। দেশের মানুষের কাছে সংস্থাটির গ্রহণযোগ্যতা এবং বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহির ব্যবস্থা ও বিভিন্ন ঘটনায় নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সন্নিবেশিত করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রাথমিক আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিভাবে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরা হবে তা ঠিক করবেন এই মন্ত্রীরা। মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে কাজ করছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফর নিয়ে গতকাল এই সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের বাইরে থেকে ভার্চুয়ালি তাতে অংশ নেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করছি। কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে তারা এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এ নিয়ে ওদের সঙ্গে আলোচনা করব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার সব সিদ্ধান্তই সঠিক, এমন না। ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। আমরা আলোচনা করব এবং আশা করি, ওই দেশে পরিপক্ব লোকজন আছেন। জ্ঞানী লোকজন আছেন। তাঁরা তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন। আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালাব।’ তিনি বলেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমেরিকার বৈশ্বিক নীতি হচ্ছে সন্ত্রাস দমন করা। আমাদের দেশের যে সংস্থার (র্যাব) ওপর এই নিষেধাজ্ঞাটা এসেছে এই সংস্থাটি আমেরিকার বৈশ্বিক নীতি-সন্ত্রাস দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শুধু সন্ত্রাস নয়, মাদক চোরাচালান যেটি আমেরিকার একটি বড় ইস্যু, সেটিতে এই সংস্থাটি সহযোগিতা করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, র্যাবের কারণে দেশে অপরাধ কমেছে। র্যাব মোটা দাগে দুর্নীতিপরায়ণ না। টাকা-পয়সা দিয়ে ওদের অবস্থান পরিবর্তন করা যায় না। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ খুব শক্তিশালী দেশ না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে—এমন ইঙ্গিতও ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় প্রতিবছর ছয় লাখ লোক নিখোঁজ হয়। বছরে ১৭ হাজার লোক রাস্তায় পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। এর জন্য তো তাদের দেশের সব প্রতিষ্ঠানে যাঁরা চাকরি করেন তাঁদের ওপর কোনো শাস্তি আরোপ করতে আমি শুনিনি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এত শক্তিশালী দেশ নই। তার ফলে হঠাৎ করে কোনো কোনো লোকের প্ররোচনায় বা বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার এনজিও সংস্থার কথায় এমন একটি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। যেখানে আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমেরিকার নিজেদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর হাজারখানেক লোককে পুলিশ মেরে ফেলে। বিচারবহির্ভূত হত্যা। আর আমাদের কালেভদ্রে একজন-দুজন মারা যায়। আমেরিকায় যে এত লোক মারা যায়, আমেরিকান সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খুব…। কারণ তারা মনে করে, তারা ‘লাইন অব ডিউটিতে’ (দায়িত্ব পালনের সময়) এই কাজটা করেছে।”