সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সোমবার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে নেভাল একাডেমিতে নৌবাহিনীর শীতকালীন কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় সরকারপ্রধান বলেন, নৌবাহিনীকে যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করতে নানামুখী কাজ চলছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাহিনীর সদস্যদের সদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে তোমাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি আশা করব, তোমাদের দেশপ্রেম, শৃঙ্খলাবোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা তোমাদের অধস্তনদেরও একইভাবে দেশের প্রয়োজনে আত্মনিবেদনে অনুপ্রাণিত করবে।’
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বঙ্গবন্ধু’র অনুকরণে রাখা প্রতীকীতে কুচকাওয়াজের মাধ্যমে আরোহন করছেন কমিশন পাওয়া ৪৪জন নৌ অফিসার। এ অর্জনে তাদের পেরিয়ে আসতে হয়েছে কঠোর প্রশিক্ষণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‌‘প্রশিক্ষণ শেষে আজ তোমরা ৪৪ জন প্রশিক্ষণার্থী বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছো। কর্মজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে তোমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তোমাদের মনে রাখতে হবে, যে কঠোর প্রশিক্ষণ তোমরা শেষ করলে তা তোমাদের উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র।’
বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ এবং সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নবীন নৌ কর্মকর্তাদের কর্মজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সাবভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজ তোমাদের চমৎকার কুচকাওয়াজ উপভোগ করতে পেরে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তোমরা তোমাদের অদম্য আগ্রহ, দৃঢ় মনোবল ও সাহসী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছো। আমি আশা করি, চাকরি বা ব্যক্তিগত জীবনের যেকোনো সংকটে তোমরা এ ধরনের সুবিবেচনা ও নেতৃত্ব সুলভ গুণাবলীর পরিচয় দেবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ সব ক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ ও কর্তব্যনিষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে বিরল সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।’
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা জয়ের পর বিশাল সেই সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশে নৌ বাহিনীর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষার পাশাপাশি আত্মসামাজিক উন্নয়নেও সমানভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এজন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। দেশের যুব সমাজ থেকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী একাডেমি গড়ে তোলা ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেটি বাস্তবায়নে ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়। এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে নেভাল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ সুবিধা আজ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে।’

গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আয়োজনে যুক্ত হলেও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল নেভাল একাডেমিতে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
নৌবাহিনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমুদ্র সম্পদের গুরুত্ব অনুধাবন করে ঐতিহাসিক ৬ দফায় নৌবাহিনী সদর দপ্তর চট্টগ্রামে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমুদ্রভিত্তিক শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনের জন্য শক্তিশালী নৌবাহিনীর কোনো বিকল্প নেই। তাই তিনি স্বাধীনতার পর একটা দক্ষ, শক্তিশালী, আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর নৌবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোস্লাভিয়া ও ভারত থেকে পাঁচটি আধুনিক রণতরী সংগ্রহ করেন এবং ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নেভাল এনসাইন প্রদান করেন। একইসঙ্গে তিনি নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈশাখাঁসহ ৩টি ঘাঁটি এবং ৩টি জাহাজ কমিশনিং করেন। এদিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বানৌজা সুরমায় প্রথম নৌবাহিনীর মহড়া পরিদর্শন করেন। জাতির পিতার প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্য থেকে যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন, যা ছিল বাংলাদেশের সমুদ্র নীতির ভিত্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা সুনির্দিষ্টকরণ সম্ভব হয়েছে এবং ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার বিশাল সমুদ্র এলাকায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটা পেশাদার, উন্নত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন এবং সেই লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে তিনি একটা প্রতিরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেন। দুর্ভাগ্য, সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে জাতির পিতা যখন একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে তাকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা।

শীর্ষ সংবাদ