গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পণ্যবাহী গাড়ির চাপ পড়েছে। মাঝে কিছুদিন চাপ কম থাকলেও তিন দিন ধরে পুনরায় চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ২০ থেকে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরির নাগাল পাচ্ছে। এতে শীতে আটকে থাকা গাড়িচালক ও সহকারীকে বাড়তি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী গাড়ি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অপেক্ষা করছে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও জরুরি পচনশীল পণ্যের গাড়ি দ্রুত ঘাট পার হওয়ায় সাধারণ পণ্যের গাড়ি লম্বা লাইনে পড়ে আছে। ফেরির জন্য অপেক্ষমাণ অধিকাংশ এসব গাড়ি গতকাল সোমবার দুপুরের পর এসেছে। ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা পার হলেও তারা এখনো ফেরির নাগাল পায়নি। ফেরিতে উঠতে আরও দু-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া ফেরিঘাটে আসা যাত্রীরা শীতের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জটলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দৌলতদিয়া ক্যানালঘাট এলাকায় লাইনে আটকে আছে একটি পাটবোঝাই ট্রাক। গাড়ির ভেতর স্টিয়ারিং সিটে বসে শীতের মধ্যে খিচুড়ির প্যাকেট হাতে নিয়ে খাচ্ছিলেন তিনি। আলাপকালে গাড়িচালকের আসনে বসা রাজু শেখ বলেন, ফরিদপুরের কানাইপুর থেকে পাট বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশে গতকাল বেলা একটার দিকে আসেন তাঁরা। বেলা তিনটার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পেছনের সিরিয়ালে দাঁড়ান। পাশের লাইনে থাকা জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি আগেভাগে ফেরিতে ওঠার ব্যবস্থা থাকায় সাধারণ পণ্যের গাড়িকে অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে মাত্র দুই কিলোমিটার পথ আসতে সময় লেগেছে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। এখনো ঘাট থেকে আরও প্রায় দুই কিলোমিটার পেছনে আছে তাঁদের গাড়ি। ফেরিতে উঠতে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, তা জানা নেই তাঁদের।
রাজবাড়ী থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা করে গতকাল বেলা তিনটা থেকে ঘাট এলাকায় গাড়ির সিরিয়ালে আটকে আছেন। তাঁকেও প্রায় দুই কিলোমিটার পথ সামনে এগোতে সময় লেগেছে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। তারপরও তাঁদের গাড়ি ঘাট থেকে আরও প্রায় দুই কিলোমিটার পেছনে আছে। তবে সকালের দিকে জরুরি পচনশীল পণ্যের গাড়ি বা যাত্রীবাহী বাসের চাপ না থাকায় সহজে ফেরিতে উঠতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
ফেরিতে ওঠার অপেক্ষমাণ লাইনে থাকা গাড়ির ভেতর বসে সকালের নাশতা খিচুড়ি খাচ্ছেন চালক রাজু শেখ। দৌলতদিয়া ক্যানালঘাট, রাজবাড়ী, ২১ ডিসেম্বর সকাল
ফেরিতে ওঠার অপেক্ষমাণ লাইনে থাকা গাড়ির ভেতর বসে সকালের নাশতা খিচুড়ি খাচ্ছেন চালক রাজু শেখ। দৌলতদিয়া ক্যানালঘাট, রাজবাড়ী, ২১ ডিসেম্বর সকালছবি: প্রথম আলো
যশোর থেকে আসা ঢাকার মোহাম্মদপুরগামী আরেক ট্রাকচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি গতকাল বিকেলে লম্বা লাইনে আটকা পড়েন। স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে সড়ক বিভাজকে প্রবেশের আগেই পেছন থেকে সামনের দিকে চলে আসেন। এ জন্য তাঁর অন্তত এক কিলোমিটার পথের দূরত্ব কমে এসেছে। সময়ও বেঁচেছে তাঁর চার-পাঁচ ঘণ্টা। এ কারণে তিনি দ্রুত ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্টে আসতে পেরেছেন। এরপরও ফেরিতে উঠতে তাঁর ১৫ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে।
এদিকে পাটুরিয়া প্রান্তে পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাস দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা যশোরগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাসের তত্ত্বাবধায়ক কবির হোসেন জানান, তাঁরা গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে সিরিয়ালে আটকা পড়েন। প্রায় চার ঘণ্টা পর সকাল সাতটার দিকে ফেরিতে ওঠার সুযোগ পান। তাঁদের বাসের মতো এ রকম যাত্রীবাহী বাসকে তিন-চার ঘণ্টা করে আটকে থাকতে হয়।
ঈগল পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাটের দায়িত্বরত প্রতিনিধি ভরত মণ্ডল বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে দূরপাল্লার পরিবহনগুলোকে ঘাটে এসে তিন-চার ঘণ্টা করে আটকে থাকতে হচ্ছে। গতকাল রাতে ঘাটে আসা দূরপাল্লার নৈশ কোচ ভোরে নদী পাড়ি দেয়। একইভাবে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায়ও তিন-চার ঘণ্টা আটকে থাকছে। তীব্র শীতে আটকে থাকা যাত্রীদের বাড়তি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট কাউন্টারে কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাজু আহম্মেদ বলেন, গতকাল রাতে যান্ত্রিক ত্রুটিতে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি হাসনাহেনা বিকল হয়ে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় রয়েছে। বর্তমানে ছোট–বড় মিলে ১৫টি ফেরি চলছে। পচনশীল গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস সাধারণত তিন-চার ঘণ্টা পর ফেরিতে উঠছে। সাধারণ পণ্যবাহী বা অপচনশীল গাড়িগুলোকে প্রায় ২০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।