লাকীর বিরুদ্ধে  অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক

লাকীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুযায়ী- ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভুয়া বিলসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে তিনি শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন। ৬০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন লাকী সিন্ডিকেটের ৮ কর্মকর্তা।

এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২ সদস্যের টিম করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা অর্থের একটি বড় অংশ পাচারের তথ্যও পেয়েছে দুদক। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোজাম্মেল হক আরও বলেন, দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে অনুসন্ধান টিম করা হয়েছে। অনুসন্ধান টিমের তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে আছেন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

দুদকের টেবিলে থাকা অভিযোগে বলা হয়, লিয়াকত আলী লাকী প্রায় একযুগ ধরে শিল্পকলা একাডেমির ডিজির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি গত বছরের ৩০ জুন বিভিন্ন ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ৩০ জুন একজন সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তাকে এই কাজে সহায়তা করেন দুজন কালচার অফিসার সহকারী পরিচালক (হিসাব) আল হেলাল ও উপপরিচালক (অর্থ) শফিকুল ইসলাম। গত বছরের ৩০ জুন ৮ জন কালচার অফিসারকে জেলায় বদলি করে মন্ত্রণালয়। ডিজি প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ করে তাদের বদলির আদেশ বাতিল করান। এর পর এসব কর্মকর্তাকে নিয়ে মিটিং করে অনুষ্ঠান দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি বিভিন্ন জেলার কালচার অফিসারদের ঢাকায় এনে সুযোগসুবিধা দিয়ে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। একই সঙ্গে তার সিন্ডিকেটের ৮ জন জেলা কালচার অফিসার বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসব অফিসারের মধ্যে চাকলাদার মাসুদ সুমন ১০ কোটি টাকা, এরশাদ হাসান ৫ কোটি টাকা, সুজন মাহবুব ৫ কোটি টাকা, মোস্তাক আহমেদ ১০ কোটি এবং ৫টি মাইক্রোবাস, রাকিবিল বারী ৫ কোটি, রিফাত জাহান ৫ কোটি, আল হেলাল ১০ কোটি ও শহিদুল ইসলাম ১০ কোটি টাকা অর্জন করেন। অভিযোগে বলা হয়, করোনার কারণে এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী হয়নি। কিন্তু ১২-১৫ কোটি বাজেট লোপাটের জন্য ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করে কাগজপত্র বানানো হয়। যারা চারুকলার কাজ বোঝেন, তাদের এর সঙ্গে রাখা হয়নি। তিনি অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজনে জোট বাঁধেন। ২০২০-২১ অর্থবছরের শিল্পকলা একাডেমির অব্যয়িত ৩৫ কোটি টাকা লোপাটের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অর্থ আত্মসাতের পথ সুগম করতে তিনি একাডেমি সচিবকে জুন মাসে সরিয়ে দিয়ে অন্য একজনকে সচিবের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিবছর জুন মাসে ২৫-৩০ কোটি টাকা লোপাট করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ৩০ জুন শিল্পকলা একাডেমির আগের সচিব নওশাদ হোসেন বদলি হলে ওইদিনই নতুন আদেশ জারি করে একাডেমির চুক্তিভিত্তিক পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিমকে সচিবের দায়িত্ব দেন লাকী। এর পর ৩০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে ২৬ কোটি টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে করে আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সংগীত বিভাগের কক্ষে ব্যবহারের জন্য পর্দা, ক্রোকারিজ ও আসবাব না কিনে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ, ডান্স এগেইনস্ট করোনা কর্মসূচির আওতায় নৃত্যদলের সম্মানী, হার্ডডিস্ক ক্রয়, ডকুমেন্টেশন, প্রপস-কস্টিউম, প্রচার ও বিবিধ ব্যয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।

অপরাধ