কানাডায় কোভিড বিধিনিষেধ ও টিকার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে দেশটির ট্রাক চালকরা ‘ফ্রিডম কনভয়’ নামে আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনের অনলাইন প্রচারের পেছনে একটি বাংলাদেশি গ্রুপের হাত রয়েছে বলে খবর এসেছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নিউজ সাইট গ্রিড বলছে, ফেসবুকে আন্দোলনের প্রচারের বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে বাংলাদেশের ‘একটি ডিজিটাল মার্কেটিং ফার্মের’ খোঁজ তারা পেয়েছে। গ্রুপটি কানাডার ওই আন্দোলনের নামে তহবিল সংগ্রহ ও প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে পুরো বিশ্বে আলোচনায় থাকা ওই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী, ট্রাম্পপন্থি উগ্রবাদীদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথাও বলেছে গ্রিড। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার ওই আন্দোলনকে চালিয়ে নিতে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে গ্রুপ খুলে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি গিভসেন্ডগো সাইটের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের প্রচার চালানো হয়েছে।
এই অনলাইন প্রচারাভিযানের মাধ্যমে কোভিড বিধির বিরুদ্ধে ওই আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন, অর্থ ও রসদ যোগানো হয়েছে, জনবল সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রচার চালানো হয় বলে গ্রিডের ভাষ্য। কানাডার ওই আন্দোলনকারীদের অবরোধে অটোয়া, অন্টারিও এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনটি সীমান্ত ক্রসিং কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার পথ পরিষ্কার করতে সক্রিয় হয়েছে কানাডার পুলিশ। কানাডার মতো বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফ্রান্সেও।
গ্রিডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রিডম কনভয়ের প্রচারে যে দুটি ফেসবুক গ্রুপ সবচেয়ে বেশি অনুসারী পেয়েছে, সেগুলোর পেছনে ছিল বাংলাদেশি ওই ‘ডিজিটাল মার্কেটিং ফার্ম’। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার ওই গ্রুপ দুটো বন্ধ করে দেয়।
‘ফ্রিডম কনভয় ২০২২’ এবং ‘কনভয় টু অটোয়া ২০২২’ নামের ওই দুই ফেইসবুক পেইজ খোলা হয়েছিল জানুয়ারির ২৭ ও ৩০ তারিখ। এরপর দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই পেইজ মিলিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার অনুসারী জুটিয়ে ফেলে তারা। ওই দুটি পেইজ তৈরি করা এবং পরিচালনার সঙ্গে সেই বাংলাদেশি ফার্মের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে গ্রিড।
এসব ফেসবুক গ্রুপে গিভসেন্ডগো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অটোয়ার আন্দোলনের জন্য চাঁদা দেওয়ার আহ্বান জানানো হতো। পাশাপাশি কানাডায় এ আন্দোলনের জন্য সদস্য সংগ্রহ করা হত। কেবল কানাডার আন্দোলনে নয়, অস্ট্রেলিয়ায় ‘কনভয় টু ক্যানবেরা’ নামে আন্দোলনের জন্য খোলা একটি বড় ফেসবুক পেইজের পেছনেও এক বাংলাদেশির হাত থাকার তথ্য এসেছে। ওই বাংলাদেশি একাই পেইজটি চালান।
ফেসবুকের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি নিউজও এক প্রতিবেদনে বলেছে, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, রোমানিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে কানাডার আন্দোলনের বেশ কিছু ফেসবুক পেইজ চালানো হচ্ছিল। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসব পেইজের নাম বদলে নিয়ে উগ্রবাদী প্রচার চালানোর তথ্য পাওয়ার কথা বলেছে এনবিসি নিউজ।
গ্রিড লিখেছে, ‘ফ্রিডম কনভয় ২০২২’ এবং ‘কনভয় টু অটোয়া ২০২২’ নামের ফেসবুক পেইজ দুটির পেছনে যে ‘বাংলাদেশি ডিজিটাল মার্কেটিং ফার্ম’ জড়িত, তার ‘প্রতিষ্ঠাতা’ জাকির সৈকতের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার তারা ভিডিও কলে কথা বলেছে। সৈকত সেখানে নিজের চেহারা দেখাননি। তবে ওই দুটো ফেসবুক পেইজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তিনি স্বীকার করেছেন বলে গ্রিডের ভাষ্য। তবে ওই আন্দোলনের সমর্থনে ফেসবুকে প্রচার চালানোর জন্য কোনো অর্থ নেননি বলে তিনি দাবি করেছেন।