নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনা বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) সেবা পরিচালনার অনুমোদন পায় শুধু ব্যাংক। যেকোনো ব্যাংকের মাধ্যমেই এটি চালু করা সম্ভব। এখন থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনা করতে পারবে।
এমএফএস নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ডাক বিভাগের নগদ নামক প্রতিষ্ঠানের জন্য এমএফএস সেবা তথা মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনা করা সহজ হলো। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত লাইসেন্স পেতে আর কোনো বাধা রইল না।
গতকাল নতুন নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য আগের নীতিমালা সংশেধন করে নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) রেগুলেশনস, ২০২২’।
নতুন নীতিমালায় এমএফএস সেবা পরিচালনায় যুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা ও শর্তের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রোভাইডার বা এমএফএসপি বলা হবে।
বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক সম্পূর্ণ নিজস্ব মালিকানায় নতুন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে এ সেবা চালু করতে পারে। অথবা যৌথ মালিকানায়ও করতে পারে। সেক্ষেত্রে মালিকানার ৫১ শতাংশ থাকতে হবে ব্যাংকের। নতুন নীতিমালায়ও বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার প্রতিষ্ঠানকেও এই শর্ত মানতে হবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকতে হবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের। নতুন নীতিমালায় প্রতিষ্ঠান ও লেনদেনের প্রতিটি বিষয়ের সংজ্ঞা ও দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফলে এখন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনা করার সুযোগ বাড়ল। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান এমন সুযোগটি নিতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, তাৎক্ষণিকভাবে টাকা আদান-প্রদানের সুবিধার নিশ্চিত করতে এমএফএস সেবাটি চালু হয়। দেশে এটি মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিত। ২০১১ সালে এটি ডাচ-বাংলার হাত ধরে রকেট নামে শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ সেবাটি এ বাজারের শীর্ষে রয়েছে। এককভাবে সিংহভাগ গ্রাহক বিকাশের সেবা নিয়ে থাকে।
লেনদেন দ্রুত হওয়ার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা। একটা সময় এ ধরনের কাজের জন্য কুরিয়ার
প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা গড়ে উঠেছিল গ্রাহকদের।
বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে এমএফএস হিসেবে সেবা দিচ্ছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উপায়, এমক্যাশ, ট্যাপ, সোনালী ক্যাশসহ বিভিন্ন নামে ব্যাংকগুলো এই সেবা দিচ্ছে।
শুরুতে ছোট-খাট প্রয়োজনে লেনদেন করাটাই মুখ্য ছিল। কিন্তু এখন নাগরিক বিভিন্ন সেবার বিপরীতে চার্জও এর মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। ফলে এটি এখন আবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ, মোবাইলে রিচার্জ, বিমার পলিসি জমাসহ নানা ধরনের সেবার বিল পরিশোধ করা যায় এমএফএসে। পোশাক কারখানাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতাদি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যম বিতরণ করছেন। তারা আবার সেই টাকা থেকে স্বজনদের টাকা পাঠাচ্ছেন।
ফলে গ্রাহকের সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি হিসাব সংরক্ষণেও সুবিধা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। আবার গ্রামীণ পর্যায়ের ক্ষুদ্র দোকানিদেরও আয় বেড়েছে। লেনদেনের সুবিধা থাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। লেনদেনের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাড়ছে এজেন্ট। দেশের গ্রাম পর্যায়ে এখন এই সেবাটি পৌঁছে গিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৯। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার। ২০২১ সালে এমএফএস সেবায় গ্রাহক বেড়েছে এক কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার। নিবন্ধিত গ্রাহকের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ছয় কোটি ২৩ লাখ এবং শহরের চার কোটি ৯২ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ছয় কোটি ৩০ লাখ এবং নারী গ্রাহক প্রায় পাঁচ কোটি। এক বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫৬১ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৩ হাজার ৫৫৮ জনে