ঢাকাঃ এবারের অমর একুশের বই মেলায় জিনিয়াস পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে দেশের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত ঔপন্যাসিক ফেরদৌস হাসান এর উপন্যাস “অলৌকিক বাতাসের গান”। ফেরদৌস হাসান যিনি একাধারে একজন কবি,নাট্যকার,গীতিকার,ঔপন্যাসিক,চলচ্চিত্রকার। তার পরিচালিত প্রায় হাজারের ওপর নাটক বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে, তার লেখা গল্প ও চিত্রনাট্যে শতাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে নানা পরিচালকের মাধমে। ফেরদৌস হাসান যার পুরো নাম আকতার ফেরদৌস রানা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা। বর্তমান দেশের মিডিয়া অঙ্গনে ফেরদৌস হাসান এক আলোচিত নাম। প্রতিবারের মতো তার রচিত উপন্যাস “অলৌকিক বাতাসের গান” এবারের বই মেলায়ও সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসেবে সাড়া ফেলবে এবং পাঠকের প্রশংসা কুড়াবে বলে আশা করছি। ফেরদৌস হাসান তার রচিত উপন্যাস সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় যা বলেছেন,
আমি তখন লেফটেন্যান্ট। ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুতদের ত্রাণ নিয়ে উপকূলে যেতাম। আমাদের দেখলে মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলত। কেউ ত্রাণ চুরি করার সাহস পেত না। ডাকাতরাও ভদ্রলোক হয়ে যেত।
সেই সময় প্রায় একটা জিনিস দেখতাম। অল্প বয়সী কোনো মেয়ে নদীর পাড় ধরে হাঁটছে। সে সাগরের দিক থেকে নদীর উজানের দিকে চলছে। তার চুল উড়ছে। আঁচল। কিন্তু কোনো দিকে তার খেয়াল নেই। কারো প্রতি আগ্রহ নেই। নির্মোহ। নির্বিকার। যেটা তার বয়েসের সাথে ভারী বেমানান।
আবার আমার পাশ দিয়ে নৌকার গুণ টানতে টানতে চলেছে এক যুবক। সে-ও যেন রোবট। তীব্র বাতাস ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই যেন তাকে প্রোগ্রাম করা। কোনো কিছুই তাকে আটকাতে পারবে না।
আমি খুব কৌতুহলী হয়ে পড়ি। আমি ওদের অনুসরণ করা শুরু করি। সেটা না করলেই বোধহয় ভালো করতাম। শুধু অনুসরণ করে খ্যান্ত হলেও চলতো ; কিন্তু আমি ওদের খুব কাছে চলে গিয়েছিলাম। এতো কাছে যেন মনে হতো একই চামড়ার নিচেই দুজনার শরীর। হৃদয়। ব্যথা। প্রেম।
আর আমার কানে কানে যেন আমার জন্য অন্য কোনো অলৌকিক বাতাসের গান!
ফেরদৌস হাসান বলেন, এটাই আমার এই উপন্যাসের প্রথম পাঠপ্রতিক্রিয়া। মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক হাসনাত আব্দুল হাই স্যারকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন। আমিন!
“ফেরদৌস হাসান বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতে একটি পরিচিত নাম। তাঁর বহু পরিচয়।নাট্যকার,গীতিকবি,ঔপন্যাসিক, হাজারের ওপর নাটকের পরিচালক,এবং আরো।
তাঁর উপন্যাসে উঠে আসে সাধারন মানুষের জীবন।যেমন,এই বইতে তিনি বলেছেন গ্রামের বাজারে মাছ বিক্রেতে মনা আর মধু,এই দুই ভাইএর কাহিনী।কিন্তু তারা নয়,অন্য চরিত্রেরা নয়,এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্র ভাগ্যহীনা দুঃখিনী সেতারা।আকস্মিক ভাবেই এদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা অগ্রসর হয়ছে নানা ঘটিনা আর দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে। শেষ পর্য্যন্ত সেতারা আর মনার কি হয় সে বিষয়টি লেখক পাঠকদের কল্পনার জন্য রেখে দিয়েছেন সুকৌশলে।এই সমাপ্তিতে নাটকীয়তা নেই,আছে কঠিন বাস্তবতা।
এই উপন্যোসের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য হল এর ভাষা।এমন মেদহীন, পরিমিত এবং সংযত এই ভাষা যে ব্যবহৃত শব্দগুলি হয়ে উঠেছে শানিত ও লক্ষভেদী। একটা দৃষ্টান্ত দিলেই যথেষ্টঃ
‘লক্ষণ ভালো না।বুক ওঠা- নামা করে না।নাকে হাত দেয়।দম দেখে।নাই।আর কি করবে ভেবে পায় না।হাঁসফাঁস করে। দিশেহারা।আকুল হয়ে বুকে কান পাতে।মাছের ভুরভুরির মত শব্দ পায়।গভীর পানির নিচ থেকে উঠে আসা বুদবুদের মত।ধুকধুক ধুকধুক।’
খুব সহজ মনে হয়,কিন্ত লিখতে গেলে বোঝা যাবে কত কঠিন।যিনি অবলীলায় এমন ভাষায় লিখে যান তিনি ভাষার যাদুকর। ফেরদৌস হাসানকে অভিনন্দন জানাই।”
বইটির প্রকাশক হাবিবুর রহমানের জিনিয়াস পাবলিকেশন প্রকাশ করেছে।
কপি সংগ্রহ করতে চাইলে অমর একুশের বই মেলা, জিনিয়াস পাবলিকেশন, প্যাভিলিয়ন ২০ ( সরোবরের দক্ষিণ -পশ্চিম কোনায়), সরোয়ার্দি উদ্যান।