দেশের পোশাক খাতের ঋণখেলাপি ফাহামী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। পোশাক ব্যবসায়ী মোতাহারুল ইসলামী চৌধুরীর মালিকানাধীন গ্রুপের একাধিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান পোশাক উৎপাদনে জড়িত। তাদের মধ্যে ব্যবসার প্রয়োজনে ফাহামী ট্রাউজারস লিমিটেডের নামে জনতা ব্যাংক লিমিটেড কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। পরে ব্যবসায়িক ব্যর্থতা ও পরিচালনাগত অদক্ষতায় ব্যাংকটিতে ৩০ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণখেলাপি হয়েছে। আর এ ঋণ আদায়ে বন্ধক থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
জনতা ব্যাংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ফাহামী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের একাধিক প্রতিষ্ঠান এখন বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি গ্রাহক। সর্বশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ফাহামী ট্রাউজারস লিমিটেড। যদিও ব্যাংক একাধিকবার তাগাদা দিলেও পাওনা পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি। ২০২১ সালের ২৪ জুনের ব্যাংক হিসাব অনুসারে সুদাসলে মোট খেলাপি পাওনা হয়েছে ৩০ কোটি ৯০ লাখ তিন হাজার টাকা। আর এ খেলাপি পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত মাসের শেষ দিকে সাভারের বাইপাইল মৌজায় সাড়ে ৩৬ শতাংশ জমি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়।
এর আগে ফাহামী গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড প্রিন্সিপাল শাখায় খেলাপি হয়। এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফাহামী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফাহামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফাহামী নিটওয়্যার লিমিটেড ও ফাহামী ড্রেসেস লিমিটেডের নামে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রথম দিকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পাওয়া গেলেও গত এক বছরের বেশি সময়ে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা পাওনা পরিশোধে একাধিকবার ব্যর্থ হন। তাদের ব্যবসায়িক ব্যর্থতা ও পরিচালনাগত অদক্ষতায় ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখায় ৩৭৯ কোটি সাত লাখ ৮৪ হাজার ৬৩২ টাকা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। এর মধ্যে ফাহামী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২১৬ কোটি ১৫ লাখ, ফাহামী অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৬৩ কোটি ৩৭ লাখ, ফাহামী নিটওয়্যার লিমিটেডের ৩০ কোটি ৮৩ লাখ এবং ফাহামী ড্রেসেস লিমিটেডের ৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আছে। এসব ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ধক আছে সাভারের দুই তফসিলে মোট ৬৩ শতক জমিসহ দুটি ১০ তলা (দুই লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট) কারখানা বিল্ডিংসহ সব ধরনের সম্পদ ও স্বত্ব। পাশাপাশি সংসদে প্রকাশিত শীর্ষ ৩০০ খেলাপি তালিকায় গ্রুপটির দুটি প্রতিষ্ঠানের নামও ছিল।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক জনতা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ফাহামী গ্রুপের সম্পদের চেয়ে ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এ গ্রুপের কিছু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে আছে। আর যেগুলো চালু আছে তা কতদিন চালু থাকবে তারও নিশ্চয়তা নেই। তারা নিজেরা শেষ হবে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের আমানত শেষ করবে। তাদের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দাবি করছি। এক্ষেত্রে ব্যাংক বাঁচাতে হলে সরকারের উচিত উচ্চ আদালতে রিট কিংবা স্টে অর্ডারের সুযোগ বন্ধ করা। এতে সাধারণ জনগণের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
এ বিষয়ে ফাহামী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোতাহারুল ইসলামী চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যবহƒত সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে জেসিকা অ্যাপারেলস স্থাপনের মাধ্যমে মোতাহারুল ইসলামী চৌধুরী পোশাক খাতের ব্যবসায় আসেন। পরে এ ব্যবসায়ী ফাহামী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফাহামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফাহামী নিটওয়্যার লিমিটেড, ফাহামী ড্রেসেস লিমিটেড, ফাহামী টাউজারস লিমিটেড, ফাহামী শার্টস লিমিটেড, ফাহামি ওয়াশিং লিমিটেড এবং জেসিকা অ্যাপারেলস লিমিটেড প্রভৃতির সমন্বয়ে ফাহামী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি ব্যবসায়িক গ্রুপ গড়ে তোলেন। এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান সাভারে। এর মধ্যে ২০০০ সালে ফাহামী অ্যাপারেলস, ২০০৫ সালে ফাহামী ইন্ডাস্ট্রিজ ও ফাহামী নিটওয়্যার, ২০০৬ সালে ফাহামী ড্রেসেস ও ফাহামী শার্টস এবং ২০১০ সালে ফাহামী টাউজারস স্থাপন করেন। কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যর্থতা ও পরিচালনাগত অদক্ষতায় সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে প্রথম সংসদ অধিবেশনে প্রকাশিত শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশিত হয়। এ তালিকায় ফাহামি গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। এর মধ্যে ফাহামী নিটওয়্যার লিমিটেড ১৯৪ নম্বরে আছে।