রাজধানীসহ সারা দেশে তৃণমূলে সংগঠন গোছাতে তৎপরতা বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-মহানগর, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ভুল বোঝাবুঝি, নেতৃত্বের সংঘাত সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচনের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাই দলটির অন্যতম লক্ষ্য। দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার আগে দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে সাংগঠনিক বেশকিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন এবং সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে বলেন। এর আগেও দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেছিলেন শেখ হাসিনা। পূর্বে গঠিত সাংগঠনিক টিমকে তৃণমূলে সফরের নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে সম্মেলনকে গুরুত্ব দিচ্ছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে দলীয় সভানেত্রী আমাদের একটা দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী জুনের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’
জানা গেছে, আগামী ২৩ সালের শেষের দিক অথবা ২৪ সালের প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন এলাকায় দলের বাইরেও একটি বলয় গড়ে উঠেছে। ওই বলয় ভেঙে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাই এখন অন্যতম কাজ বলে মনে করছেন দলের নীতি নির্ধারকরা।
দলীয় সূত্রমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে কোনো অপতৎপরতা মোকাবিলায় নেওয়া হবে নানা পরিকল্পনা। জনগণের প্রত্যাশা পূরণের দল হিসেবে নতুন বছরে জনগণের সমর্থন নিয়েই এগিয়ে যেতে চায় আওয়ামী লীগ। সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের আগে যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায় ক্ষমতাসীন দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় যে কোনো অপতৎপরতা রুখতে চায় নেতারা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আগামী ৩১ মার্চ নওগাঁ জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে সব জেলার সম্মেলন শেষ হবে। এ ছাড়াও ৬৭টি উপজেলার মধ্যে ইতোমধ্যে ৫৪টি উপজেলার সম্মেলন শেষ করেছি। আশা করছি এপ্রিলের মধ্যে বাকি উপজেলাগুলোও সম্মেলন শেষ হবে।’
গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে প্রায় অর্ধশত জেলা ও মহানগর কমিটির সম্মেলন বাকি রয়ে গিয়েছিল। যে ৩৫-৪০টি জেলা ও মহানগরে সম্মেলন হয়েছে সেখানেও অনেক উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে সম্মেলন বাকি। ফলে সাংগঠনিকভাবে অনেকটা অগোছালো অবস্থায় ছিল আওয়ামী লীগ। নতুন কমিটি জেলা-উপজেলা সম্মেলনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় মহামারি করোনা। সাংগঠনিক কাজ বাদ দিয়ে মানবিক কাজে উদ্যোগী হয় আওয়ামী লীগ। ২০২১ সালে করোনা কিছুটা কমে আসলে আবারও সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আবারও করোনার থাবায় বন্ধ হয় মাঠের রাজনীতি। এখন করোনার ঢেউ কমে আসায় আবারও সাংগঠনিক কাজে উদ্যোগী হয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রাজধানী ঢাকাকে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু ঢাকার সাংগঠনিক অবস্থা চরম দুর্বল। দুর্বল নেতৃত্বের কারণে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করা এখনই কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য এখন ঢাকার সংগঠনকে ঢেলে সাজানো পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন করা হবে। এখন ইউনিটগুলোর সম্মেলন চলছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলন শেষ হয়েছে। দক্ষিণের দলাদলির কারণে পুরো ইউনিটির সম্মেলন শেষ করা হয়নি। একই অবস্থা অন্য জেলাগুলোতেও। তবে এখন তোড়জোড় চলছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘চলতি মাসে টাঙ্গাইলের বাসাইল, নাগরপুর এবং গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। আগামী ২১ মার্চ কিশোরগঞ্জের নিকলী, ২৪ মার্চ ঢাকার আশুলিয়া, ৩০ মার্চ কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ, ৩১ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, ২ এপ্রিল মার্চ ধনবাড়ী, ৩ এপ্রিল কেরানীগঞ্জ মডেল উপজেলা সম্মেলন করা হবে। ২৯ মার্চ গাজীপুর, ১২ মে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ যেখানে ইউনিট সম্মেলন শেষ করা হয়েছে, সেখানে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু করতে বলা হয়েছে। আশা করছি, আগামী জুনের আগেই সব মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষ হবে।’ দলের খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলনের জন্য দ্রুত কাজ শুরু করেছেন তারা। ইতোমধ্যে খুলনা-বরিশাল-চট্টগ্রাম বিভাগে বেশ কয়েকটি জেলার বর্ধিত সভা করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ডজন খানেক জেলার সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। উপজেলা, থানা, পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন জোরালোভাবে চলছে।