কাউন্সিলের মাধ্যমে দল গোছানোর কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি। সংগঠনকে আরো শক্তিশালী ও বেগবান করতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল শুরু করেছে দলটি। দলকে সুসংগঠিত করতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা বা মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। একইভাবে পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা ও পৌর কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। গত বছরের অক্টোবরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় তৃণমূলে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনে ব্যস্ত বিএনপি। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার কাউন্সিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তারা কাউন্সিলে তদারকি করছেন।
জানা গেছে, ওয়ার্ড থেকে জেলা অথবা মহানগর পর্যন্ত কীভাবে ধাপে ধাপে কমিটি করতে হবে তার একটি সহজ গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। সেটা দলের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করতে বলা হয়েছে। সেই সাংগঠনিক ক্যালেন্ডার মোতাবেক তৃণমূল গোছাচ্ছে বিএনপি।
গতকাল শুক্রবার বগুড়া সদর উপজেলার কাউন্সিলে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এছাড়াও দলের নির্বাহী কমিটির সিনিয়র নেতারা সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বগুড়া সদর উপজেলার কাউন্সিলের মোট ৭২০ জন কাউন্সিলর। বেশির ভাগই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আজ শনিবার বগুড়া পৌরসভা বিএনপির সম্মেলন হবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নয়া দিগন্তকে বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হলে কারো মনে কোনো সন্দেহ থাকার সুযোগ নেই। কারণ নিজেরা নিজেরাই তাদের নেতা নির্বাচন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল পুনর্গঠনের কার্যক্রম চলমান। আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, তৃণমূলে বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে বিতর্ক ছাড়াই নেতৃত্ব নির্বাচন হয়। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে কোনো আফসোস থাকে না। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে সংগঠন পুনর্গঠন কার্যক্রম করছেন। আশা করছি, আমরা তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।
জানা গেছে, আগামী ২১ মার্চ সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন হবে। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর আগামী ২৮ মার্চ দিনাজপুর জেলা বিএনপির সম্মেলনেও প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির মহাসচিব। এর বাইরে আগামী ২০ মার্চ গাজীপুর মহানগর এবং চলতি মাসেই নেত্রকোনা জেলা বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলা শাখার কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে। তন্মধ্যে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকার কথা রয়েছে।
দলের কয়েকটি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, যেসব জেলা অথবা মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও কার্যক্রম সন্তোষজনক, সেখানে একাধিক টিম করে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব জেলা ও মহানগরে সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক সেখানকার কমিটি ভেঙে দ্রুত আহ্বায়ক কমিটি করে পুনর্গঠন কাজ সম্পন্ন করা হবে।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয় ওই বছরই ৬ আগস্ট। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর কমিটি ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্যতম অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল এবং ওলামা দলের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি যে কোনো সময় বিলুপ্ত করা হতে পারে। আর ছাত্রদলও গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর দুই বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছে।
জানা গেছে, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দফায় দফায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রেখেছিল বিএনপি। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু হ্রাস পাওয়ায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হয়। তবে এ সময়ও জরুরি কিছু সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কমিটি দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তরে ৪৭ সদস্য ও দক্ষিণে বিএনপির ৪৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরীর সব ওয়ার্ড ও থানা কমিটির বিলুপ্ত করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ঢাকা উত্তরের ওয়ার্ডগুলোতে আংশিক কমিটি দেয়া হয়েছে। সেই সাথে গত বছরের ২১ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ যুবদলের নতুন কমিটি দেয়া হয়। যা পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর গত বছর কৃষকদল ও জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শ্রমিক দল এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি।