সময়ে প্রকল্প শেষ করছে না বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অনেক সময় অনেক প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ তো হয় না। বরং সময় বৃদ্ধি পেতে থাকে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৪১৫টি প্রকল্প শেষ করার কথা। অর্থাৎ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার জন্য পরিকল্পনা কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করবে সে প্রত্যাশা করেছেন পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সদস্য প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।

পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা না হলে এসব প্রকল্পের সুফল প্রাপ্তিেেত জনসাধারণ বঞ্চিত হবে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ না হলে বাজেট প্রক্রিয়ায় অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যা বাজেট ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে শেষ করার জন্য ৪৪২ প্রকল্পের জন্য করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ৭৬টি প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হবে না। তবে এসব প্রকল্প চলতি অর্থবছরের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কোনো ধরনের সংশোধন না করার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মোট ৩টি প্রকল্প ছিল যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি প্রকল্প শেষ হবে না। খোদ পরিকল্পনা বিভাগের ২টি প্রকল্পের মধ্যে কোনোটাই চলতি বছর শেষ হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্পের মধ্যে ১টি প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। জননিরাপত্তা বিভাগের ১১টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি প্রকল্প শেষ হবে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্পের কোনোটাই শেষ হচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি প্রকল্প শেষ হবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্পের মধ্যে ১টি প্রকল্প শেষ হচ্ছে না।

জানা গেছে, বেশিরভাগ শেষ না হওয়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ প্রকল্প। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মোট ১৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প শেষ হবে না। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১টি মাত্র প্রকল্প। তাও আবার এই প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে না। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মোট ৪টি বিনিয়োগ প্রকল্পের মধ্যে ১টি বিনিয়োগ প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। তবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন আরও ২টি প্রকল্প শেষ হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ৫টি প্রকল্পের মধ্যে ২টি প্রকল্প শেষ হবে না।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মোট ৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি বিনিয়োগ প্রকল্প শেষ হবে না। তবে এই মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি সংশ্লিষ্ট উইংয়ের কর্মকর্তা পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে। পল্লী উন্নয়ন সমবায় বিভাগের ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি প্রকল্প শেষ হবে না। স্থানীয় সরকার বিভাগের ৬৮টি প্রকল্পের মধ্যে ৩৫টি প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না।

জানা গেছে, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের সংখ্যার তুলনায় শেষ হবে না এমন প্রকল্পের সংখ্যা বেশি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মোট ৭টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। তবে আশার কথা পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্পই শেষ হচ্ছে। এই মন্ত্রণায়ের মোট ৭টি প্রকল্প ছিল নির্ধারিত সময়ে শেষ করার জন্য।

ভূমি মন্ত্রণালয়ে মাত্র ১টি প্রকল্প ছিল। কিন্তু তাও শেষ হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান। তবে প্রকল্পটি শেষ করার জন্য বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি প্রকল্প শেষ হবে না। তবে খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ভাগ্যবান। তাদের ছিল একটি মাত্র প্রকল্প শেষ করার জন্য। তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মোট ৫৪টি প্রকল্প ছিল শেষ করার জন্য। কিন্তু শেষ হয়েছে ৩৩টি। বাকি রইল ২১টি। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই ২১টি প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ১১টি প্রকল্পের মধ্যে বাকি থাকবে ২টি। আর রেলপথ, বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাকি থাকা প্রকল্পের সংখ্যাও কম নয়। বিদ্যুৎ বিভাগের ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি প্রকল্প শেষ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

এসব শেষ না হওয়া প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক সদস্য জানান, ইতোমধ্যে আমরা ১১টি সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছি কেন নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ হবে না। এর পাশাপাশি প্রায় ১০ বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে চলমান প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।

আন্তর্জাতিক